Tuesday, December 4, 2018

চিকেন লাজানে ,,, আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে

আজ প্রথমবার বানিয়েছিলাম চিকেন লাজানে ( lasagna) .. বড়ই ঝঞ্ঝাটিয়া খাবার । প্রচুর প্রস্তুতি ,,,

উপকরণ
লাজানে সিট 10 টা (5 মিনিট করে নিন গরম হলে ভিজানো)
250 গ্রাম বোনলেস চিকেনের ছোট ছোট কিউব
200 গ্রাম সালামি স্লাইস
আমূল মোজারেলা চিজ
চিজ স্লাইস
মিক্সড হার্বস
পার্সলে
গোলমরিচ গুঁড়ো
নুন
রসুন আধ কোয়া
অল্প চিনি
ধনে পাতা
কাঁচা মরিচ
টমেটো 500 গ্রাম
পেঁয়াজ মাঝারি 3 টে
ক্যাপসিকাম মাঝারি 2 টো
বাটার 50 গ্রাম

প্রণালী
টমেটো রসুন কাঁচা মরিচ অল্প তেলে ভেজে ধনে পাতা দিয়ে নুন চিনি মিশিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। পেস্ট করতে জল লাগলে ,,জলের বদলে দুধ ব্যবহার করুন। সস এর সিজিনিং চেক করে নিন। এবার পেঁয়াজ ক্যাপসিকাম কিউব করে কেটে নিয়ে আরো কিছুটা ধনে পাতা কুচিয়ে নিতে হবে। কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা ভাজতে হবে। এবার চিকেন কুচি এড করুন । ঢাকা দিয়ে ঢিমে আঁচে ভেজে নিন । এবার তাতে ক্যাপসিকাম ও সস এড করুন। আলাদা নুন এর দরকার হবে না। আবার ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। চিকেন সেদ্ধ হলে আঁচ বন্ধ করে দিন। এবার একটা বড় পাত্রে জল গরম করে তাতে নুন আর তেল দিন ,,, তাতে সিট গুলো ডুবিয়ে রাখুন মিনিট 5। জুড়ে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার একটা বেকিং ডিস কে বাটার দিয়ে গ্রিজ করুন। বেস এ সস দিন তার উপরে লাজানে সিট বসান আবার সস দিন এবার চিকেন এর মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন তার উপরে মোজারেলা চিজ গ্রেট বা স্লাইস করে দিন । আবার সিট দিয়ে এবার সালামির স্লাইস ও চিজ স্লাইস  দিয়ে টপিং করুন । এইভাবে দুই ধরনের টপিং অল্টারনেট করে লেয়ার বানান। সব শেষে মোজারেলা চিজ আর বাটারের টপিং হবে। ওপরে মিক্সড হার্ব, পার্সলে আর গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে বেকিং সিট দিয়ে ঢেকে প্রি হিটেড 180℃ এ 20 মিনিট বেক করে আবার 10 মিনিট ঢাকা খুলে বেক করুন । 5 মিনিট স্ট্যান্ডিং টাইম দিয়ে পরিবেশন করুন।
খেতে দারুন ,, অল্পেতে পেট ভরে যায় । একা খাবেন না শেষ করা খুব কঠিন ,,,Bon Appetit
@অনিন্দিতা



বেকিং এর শেষ পর্যায়ে সস এড করা হয়েছিল 

জাস্ট বিফোর বেকিং

"শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা "



"প্রভু বুদ্ধ লাগি
আমি ভিক্ষা মাগি
ওগো পুরবাসী , কে রয়েছো জাগি।
অনাথপিন্ডদ কহিলা অম্বুদ নিনাদে।"

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা কবিতাটি মানুষকে জাগতিক সুখ দুঃখের উর্ধে গিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। আমরা আমাদের ধনের গৌরব, বংশ গৌরব মহিমা কীর্তনএ অবোধ শিশুর মতো প্রতিনিয়ত লড়াই করে নিজেদের শ্ৰেষ্ঠত্ব জাহির করি। কিন্তু ভগবানের বানানো এই বিশাল মঞ্চে আমাদের ভূমিকা অতি তুচ্ছ , তা বোঝাতে সেই মহান নাট্যকার বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেন না। কিন্তু সেই ইঙ্গিত বোঝার চেষ্টা কই ক্ষমতা বান , লোলুপ, বিবেকহীন অন্ধ মানুষের।
ভিক্ষা শব্দটার সাথে মানুষের মনের উন্নাসিক মনোভাব জড়িয়ে আছে। বেশিরভাগ লোকজন ভিক্ষা কে দুভাবে দেখেন। একদল , তাছিল্য ভরে দুপয়সা ছুড়ে দিয়ে ভাবেন পুরো জগৎ সংসারকে উদ্ধার করে দিলেন। ওপর দল, ধর্মভীরু। তারা, কোন না কোন ভগবানকে তুষ্ট করতে , কোন গ্রহ দোষ খন্ডন করতে ভিক্ষা দিয়ে থাকেন। আর একদল মানুষ আছেন যারা কোন দল ভুক্ত নন। তারা নীরবে কাজ করেন । কারোর সাহায্যের অপেক্ষা করেন না। মানুষকে অসহায় , বিপদগ্রস্ত দেখলে ঝাপিয়ে পড়েন । শীতের রাতে নিজের গরম কাপড় অনায়াসে খুলে দেন ওই ঘরছাড়া মানুষটাকে। তারা ওই গ্রহ বা ভগবানকে তুষ্ট করেন না। তাদের মন্ত্র একটাই " জীবে প্রেম করে যেই জন , সেই জন সেবিছে ঈশ্বর" ।

@অনিন্দিতা

একটি ফাঁকিবাজি চিকেন রান্নার রেসিপি

#shortcutchickenrecipe
#yummychicken

আজ করেছিলাম ফাঁকিবাজি চিকেন । সকালে চিকেন লেগ আর বাটন মাশরুম কে ম্যারিনেট করে রেখেছিলাম ,,,, দই আদা রসুন কাঁচালঙ্কা  একসাথে বেটে তাতে পরিমান মতো নুন গোল মরিচ গুঁড়া আর এভারেস্ট এর চিকেন তন্দুরি মশলা আর সর্ষের তেল মাখিয়ে রেখে দিয়েছিলাম । এবার বিকালে ফ্রিজ থেকে বার করে তাতে ছোট পেঁয়াজ দু ভাগ করে দিয়ে সাথে অল্প পারসলে দিয়ে আবার মাখলাম। ঘন্টা খানেক পর শীতের ছোট আলু সোনালী করে ভেজে নিলাম। ওই তেলেই ম্যারিনেশন সমেত মাংস ও মাশরুম দিয়ে দিলাম । দু মিনিট তেজ আঁচে কসে নিয়ে ,,, ঢেকে দিলাম । আঁচ কম রাখতে হবে। মাঝে মাঝে হালকা হাতে নাড়তে হবে। এবার চেরি সাইজ টমেটো দু ভাগ করে আর আলু দিয়ে আবার একটু কসুন। ইচ্ছা হলে একটু জলের ছিটা দিতে পারেন । চিকেন রেডি মিনিট 20 তেই। ধনে পাতা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন । গরম গরম রুটির সাথে বেশ লেগেছে বিশেষ করে বাটন মাশরুমের টেস্ট দারুন ছিল । ট্রাই করে দেখতে পারেন ,,, নিরাশ হবেন না


মন খারাপের দিন রাত্রি


 শ্রী চুপ করে বসে আছে তার প্রিয় রকিং চেয়ারটায়। চেয়ারটায় বসলেই ছোটবেলার গান মনে পড়ে যায় ,,, দোল দোল দুলুনি রাঙা মাথায় চিরুনি ,,, কিন্তু ওই বর আসবে এখুনি লাইনটা তে ওর খুব আপত্তি ছিল। কেমন যেন মনে হতো বাপের বাড়ি থেকে দূরে করে দিতে চাওয়ার এক চরম ষড়যন্ত্র । আসলে বাপের বাড়ি বলতে শ্রী তো নিজের বাড়িই ভেবে এসেছে। যতই না তার বিয়ে হোক এই বাড়িতে তার জন্ম , তার শৈশব আর কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের প্রথম আবাহন। এই বাড়ির প্রতিটা কোনায় কত স্মৃতি ,,,, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই না পাওয়া মানুষটাকে লুকিয়ে দেখা ,,,, দুপুরে ছুটির দিনে আইসক্রিম ওয়ালার প্রতীক্ষা বা বিকালে ফুচকা দাদুকে হাক ডাক,,,, সব কিছুর সাক্ষী এই বারান্দা । আবার কত না বলা কথার,  চোখের জলের ও নীরব দর্শক ,,,এই বাড়ির সেই বিশেষ ঘরটা ,,যেটা নিজের বলেই জানতো।
শ্রী বড়ই একা,,,, আমরা সবাই একা । এই একার সংসারে সবাই  পরগাছার মতো কাউকে আঁকড়ে বাঁচতে চায় ,,,, শুষে নিতে চায় একটু জীবনী শক্তি। শ্রীর আজকাল বড় মন খারাপ লাগে ,,, কেন লাগে ,,, কিসের লাগি এত বিরহ ,,,,, শ্রী ভাবে একি তার  দুঃখ বিলাস। কিন্তু কিসের দুঃখ ,,, জীবনে তো সবাই সব কিছু পায়না। অনেক মানুষ আছে যারা দিনে দুবেলা খেতে পায় না ,,, শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে তাদের আস্তানা । না না শ্রীকে এসব নিয়ে ভাবতে হয়না। শ্রীকে শুধু নিরন্তর সংগ্রাম করে যেতে হয় পারফেক্ট হবার ,,,, পারফেক্ট মেয়ে , পারফেক্ট বউ পারফেক্ট মা,,,, উফফ এর চেয়ে বোধহয় সহজ অক্সফোর্ড থেকে পাস করা । মনে মনে হেসে ওঠে শ্রী।
মাঝে মাঝেই শ্রী একটা স্বপ্ন দেখে ,,,, গভীর সমুদ্র ,,, সামনেই বোট ,,,আপ্রাণ সাঁতার কেটে যাচ্ছে শ্রী কিন্তু কিছুতেই  বোটের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। দম ফুরিয়ে আসছে তার,,, জলের বুদবুদের সাথে কিছু কথা ভেসে আসছে তার কানে ,,,   এবারেও তুই  পিছিয়ে গেলি ,,তোর কিছু হবার নয় ,বৃথা চেষ্টা,,,,, কিছুই শেখাতে পারলে না ,,, আর শুনতে পারছে না শ্রী,,,, মনে হচ্ছে জলের গভীর থেকে কেউ টেনে ধরেছে। অনুভব করলো সে ,,,রক্ত চোষা টেনটিক্যালস গুলো তার হাতে পায়ে বেষ্টনী করেছে এবার তার গলায় সুনিপুণ ভাবে প্যাঁচ লাগাচ্ছে,,,, দম বন্ধ হবার পূর্বক্ষণে এলার্ম টা শ্রীকে জাগিয়ে দিলো। আবার একটা দিন আবার একটা লড়াই পারফেক্ট হবার ।
একটা কবিতা তার বড় ভালো লাগে ,,, দুলে দুলে শ্রী পড়তে থাকে ,,,ক্ষনিকের জন্য সে ডুবে যায় তার ভালো লাগার জগতে

"everyone has choices
you can choose to be good
or bad
you can choose to do the right thing
or the wrong thing
you can choose to help fight this war
or you can choose to ignore it
if you fight you can choose how
most choose weapons
but they create more problems
than they solve
for they hurt the innocent
few choose their voice
it is a wonderful choice
but only for those few who can be heard
heard and taken seriously
I choose a pen
so I may write it all
and it will be there for all whom choose to read
you see we all have choices
good or evil
love or hate
fight or ignore
right or wrong
which will you choose?"

by Scarlet .....

@অনিন্দিতা

Thursday, August 23, 2018

ফেলে আসা দিন গুলি মোর



আমাদের ছোটবেলা ,,,সে যেন অফুরন্ত মজার ভান্ডার । কত কবিতা ছিল ,,, ঘুম পাড়ানির , গল্প শেষের , খেলার , আড়ি করার । এখনকার বাচ্ছাদের শৈশব দেখলে খুব কষ্ট হয় । পড়াশুনো, টিউটোরিয়াল , হবি ক্লাস, মোবাইল আর টিভির বাইরেও যে একটা দুনিয়া আছে সেটা যেন ওরা ভাবতেই ভুলে গেছে। এই সমস্যা আরো বেশি করে গ্রাস করছে সেইসব বাচ্ছাদের , যারা বৃহত্তর পরিবার থেকে দূরে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে । তারা না পায় দাদু ঠাম্মা ও অন্য আত্মীয়দের ভালোবাসা না জানতে পারে ব্যাংগোমা ব্যাংগোমি র কাহিনী। কত বড় বয়স অবধি ঠাকুমার কাছে, মায়ের কাছে দুপুরে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছি । বিকেলে কুমির ডাঙ্গা, চোর পুলিশ , চু কিৎকিৎ খেলা আরো কত কি। এক টাকার আলু কাবলি , দশ পয়সার হরি মটর , কারেন্ট নুন , ঘটি গরম ,,, এর সামনে কোথায় লাগে সাব ওয়ে বা কে এফ সির খাবার। আমাদের স্বল্পতা ছিল কিন্তু আনন্দের প্রাচুর্য ছিল । সাত ভাই চম্পা ছিল , সুয়োরানী দুয়ো রানী ছিল ,,, ছিল ক্ষীরের পুতুল । বন্ধুত্বে ছিল কবিতা , প্রেমে ছিল কবিতা । চুলে আলপেট কাটা ছিল , ছিল বেড়া বিনুনি আর কলা বিনুনি বাঁধা। সন্ধ্যায় শাঁখের আওয়াজ ছিল , বেষ্পতিবারে ছিল উলুর ধ্বনি। বর্ষায় কাদা মেখে ফুটবল খেলা ছিল , সরস্বতী পূজার প্রথম শাড়ি পরা আর লুকিয়ে চিঠি দেওয়া ছিল। সময় যেন ওই সমুদ্রের জল,,মুঠো ভরে ধরতে গেলে হাতে থাকে কিছু বালি আর ঝিনুক । ওই বালি ঝিনুক হচ্চে আমাদের স্মৃতিগুলো , সময়ের চালুনি চুঁয়ে জমা হয়েছে জীবনের হিসেবের খাতায় ।একটা গল্প শেষের কবিতা দিয়ে ইতি টানছি আমার , আমাদের  রূপকথার

"আমার কথাটি ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো।
কেন রে নটে মুড়ালি
গরু কেন খায়
কেন রে গরু খাস
রাখাল কেন চরায় না
কেন রে রাখাল চরাস না
বউ কেন ভাত দেয়না
কেন রে বউ ভাত দিস না
ছেলে কেন কাঁদে
কেন রে ছেলে কাঁদিস
পিঁপড়ে কেন কামড়ায়
কেন রে পিঁপড়ে কামড়াস
কুটুস কুটুস কামড়াবো
গত্তের ভিতর ঢুকবো
কুটুস কুটুস কামড়াবো
গত্তের ভিতর ঢুকবো।।"

অনিন্দিতা নস্কর

Tuesday, July 31, 2018

একটি খোলা চিঠি

প্রিয় পাবলো,
কেমন আছো তুমি  ? জানি তুমি খুব ব্যস্ত। তোমার আঁকা আজ বিশ্ববন্দিত। কত জায়গায় তোমার চিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে । তোমার চারপাশে কত মানুষের ভিড়। সেই ভিড়ের মাঝে আমাকে কি কোনোদিন খুঁজেছো তুমি? তোমার ম্যাডলিন , তোমার প্রথম মডেল কে , তুমি কি বিস্মৃতির গলিতে ছেড়ে এসেছো, পাবলো? তোমাকে পেয়েও না পাওয়ার কষ্টে পড়ে থেকেছি আমি  মাটি কামড়ে , বাঁচার লড়াইয়ে। নখের আঁচড়ে লিখেছি আমার বিরহ যাতনা-

বেণীমাধব, ও বেণীমাধব
কত'ই না ডেকেছি তোমায়,
এই নামের আড়ালে
লুকিয়ে আছে তোমার পরিচয়।
পারি না তোমায় তোমার নামে ডাকতে,
ভয় হয় যদি লোকে জেনে যায়।
বেণীমাধব, তাই দিলাম তোমার নাম,
হইনি আমি পাড়ার সেলাই দিদিমনি
দিয়েছি আমি পাড়ি সুদূরের পথে
মনের গভীরে তলিয়ে গেছ তুমি
ডুব দিয়ে তুলে আনি কিছু স্মৃতির মণি
নেই তার দাম কারো কাছে,
তবু যদি জানতাম তুমি আছো আমার'ই পাশে।
না তুমি, না তোমার ছায়া
সব'ই রইল অধরা
জীবনের গোধূলি বেলায়
যদি হয় আর একবার দেখা,,,
বেণীমাধব, একটি বার সব কিছু ভুলে
সব বেড়াজাল ভেঙ্গে একবার মিলিয়ে দাও
তোমার আমার জীবন রেখা
বাকী টুকু থাক নাই'বা হলো আঁকা।
জীবনের অনেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছি। বর্তমান জীবন অনেক দিয়েছে আমায় ,,,টাকা পয়সা, সোনার গয়না , দেশে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া ,,,,সামাজিক প্রতিপত্তি - আজ থেকে তিরিশ বছর আগে যা তোমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল । তুমি পাত্র হিসেবে আমার মায়ের চোখে গ্রহণীয় হয়ে উঠতে পারোনি পাবলো। তোমার স্বপ্ন মেদুর চোখ , গ্রিক দেবতার মতো চেহারা আমাকে পাগল করেছিল , কিন্তু আমার মায়ের চোখে শুধুই ছিল অশনি সঙ্কেত। থাক আজ সেসব কথা। আসলে মনের মধ্যে আজ আমার কথার ফুলকি । তোমায় উজাড় করে না বললে যে আমার ভালোবাসার গল্প অধরাই থেকে যাবে। ইছামতির তীরে বসে তোমার আঁকা সেই ছোট্ট বাচ্চার চারকোল পোট্রেট আজও আছে আমার কাছে । ভেবেছিলাম তোমার সাথে বাঁধবো যখন ঘর , সাজাবো যতনে ,,,,চিকনের পর্দা , পোলকা ডটের চাদর , অগুরুর গন্ধ ,,,একটা ফুলদানি রজনীগন্ধার তোড়ায় সাজানো,,,,,শুধু তোমার আসার অপেক্ষা। তোমার ঘামে ভেজা শরীরের গন্ধ , সিগারেটের গন্ধ - সব কিছুতেই ভালোবাসা ,ভালোবাসা।
উফফ দম টা যেন বন্ধ হয়ে আসছে পাবলো। আমার হাতে সময় বড়ই কম। তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল

আজো তোমার অপেক্ষায় গুণে যাই দিন।
জানতে চাও কোথায় আছি...
******
ছেড়ে আমি যায়নি তোমায়
শুধু নদীর স্রোত ছিল প্রতিকূল
সময়ের আলিঙ্গনে জমেছে ধূল।
ভুলে আমি যায়নি তোমায়
রঙিন  করেছি মন তোমার রঙে ,,,,,,।
তোমার নিশ্বাস আজো পাই ঠিক
আমার কানের পাশে
শিহরে ওঠে মন, শরীর-প্রাণ
তোমায় ভুলে যায়নি ,,,,, ।
সব ধূলো মুছে দেব--- যদি তুমি আজো আসো
দু-হাত বাড়িয়ে দেব--- জড়াবো আমার বাহুপাশে।
স ্স্কারের বেড়াজাল করেছে রাস্তা পিচ্ছিল
যত'ই তুমি বাড়াও হাত
পৌঁছাতে দেবেনা আমায় ওরা
রাস্তা বড়'ই  সঙ্কিল।

না না ,,,,ছন্দ মিলছে না । তাল কেটে যাচ্ছে কথার । সময় নেই ,,,আর সময় নেই । আচ্ছা পাবলো , আজো কি তুমি আমায় ভালোবাসো?! নাহ উত্তরের অপেক্ষা করিনা। কারন জানি যখন তুমি এই চিঠি পড়বে ততক্ষনে আমি সমস্ত জাগতিক মায়া কাটিয়ে  পোঁছে যাবো না-মনখারাপ এর দেশে। জানো পাবলো, এই মেশিনগুলো আমায় যে একমুঠো শ্বাস ভিক্ষে দিচ্ছে ওরাও জানে আমার ভিতরটা কত ফাঁকা। তাই সারাদিন পাম্প করেও ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছায় না । হারিয়ে যায় মাঝ পথে। তোমায় আমার মনের না বলা কথা আজ জানাতে পেরে অনেক হালকা লাগছে । নিজেকে মনে হচ্ছে রাস্তা শেষে আস্তানায় ফেরা কোনো ক্লান্ত পথিক
" 'Tis very sweet to look into the fair
         And open face of heaven,—to breathe a prayer
Full in the smile of the blue firmament.
Who is more happy, when, with heart's content,
         Fatigued he sinks into some pleasant lair
         Of wavy grass, and reads a debonair
And gentle tale of love and languishment?
Returning home at evening, with an ear
         Catching the notes of Philomel,—an eye
Watching the sailing cloudlet's bright career, "
কিটস তোমার বড় প্রিয় ছিল । তাই তাঁকে ই স্মরণ করে বলছি বিদায় বন্ধু, সখা , প্রিয়তম আমার । যদি হয় দেখা অন্য খানে,  অন্য কোনো জগতে ,,সেই আশায় বাঁধে মন।
ভালো থেকো ,
ইতি,
তোমার ,শুধুই তোমার ম্যাডলিন

Monday, July 9, 2018

ক্ষিদে

তিনটে ছোট্ট ঘটনা না উল্লেখ করে পারলাম না বন্ধুরা ,
১) নয়ডার একটি ভিড় ভারাক্কা ওয়ালা মার্কেট ,,,এক বৃদ্ধ শারীরিক ভাবেও খুবই দুর্বল , ,,,প্রচন্ড গরমে রোদে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছিলেন । আমায় দেখেও প্রত্যাশার হাত বাড়িয়ে দিলেন । টাকা আমি দিই না তাই ইতিউতি খুজলাম । আখের রসের দোকান ছিল একটু এগিয়ে, এক গ্লাস রস বরফ ছাড়া বানিয়ে সেই দাদুর হাতে দিলাম , ,,,উনি একচুমুকে শেষ করলেন । জিজ্ঞাসা করলাম আর চাই ,,,তৃপ্তির হাসি দিয়ে মাথা নাড়লেন আর দু হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন । মনে হল সত্যি বোধহয় রামধনু উঠেছে আকাশে।
২)দমদম ক্যান্টনমেন্ট এ 7 তারিখ ছোট্ট বাচ্ছাদের খাওয়ানোর পর ফিরছি, ,, এক বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া দাদু ,,,আমাদের পাস দিয়ে চলে যাছিলেন হঠাৎ মনে হল ,,উনি কিছু বলছেন,,,দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞেস করলাম । উনি বললেন 10 টা টাকা দেবে মা একটু চা বিস্কুট খাবো। বললাম চলুন কি খাবেন আমি খাওয়াছি । বললেন না না আমি নিজেই পারবো , পারলে শুধু ওই 10 টাকা দাও। দিলাম 20 টাকা বললাম আবার সাথে যাবার কথা ,,,কিন্তু উনি চলতে শুরু করলেন । দেখলাম গায়ের ফতুয়াটা শত ছিদ্র 😥
৩) আমার ছোট্ট পুচু সোনার (দেওরের পুচকে) জন্য কেক নিয়ে বেরছি সুগার এন্ড স্পেস থেকে সামনেই একটা রোগ পাতলা ছেলে ছেড়া চটি পরে দাঁড়িয়ে ,,,, আমায় আধো আধো স্বরে বললো "আন্টি আমায় একটা পেস্ট্রি খাওয়াবে" । বললাম আয় ,,,ভেতরে সাজানো পেস্ট্রি দেখিয়ে বললাম কোনটা খাবি । দেখালো চকোলেট পেস্ট্রি । কিনে দিলাম , বললাম বসে খা এক গাল হেসে রাস্তার পাশে পা ছড়িয়ে বসে একটু একটু করে খেতে শুরু করলো।
এমন অনেক ঘটনার আমি সাক্ষী। কিন্তু এই তিনটি ঘটনা সাম্প্রতিক কালেই হয়েছে মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কত জন খাবার নষ্ট করি আর কতজনের কাছে ওই সামান্য টুকুও কত কাঙ্খিত । কবে যে হ্যাভ এন্ড হ্যাভ নটস এর পার্থক্য দূর হবে , সবাই দুবেলা দুমুঠো খেতে পাবে জানি না । ছোট বাচ্চারাও কত বোঝে ,,,একবার একটা বাচ্চাকে খাওয়াবো বলায় সে বলে , দিদি আমার বোনকে ডাকি ও সকাল থেকে কিছু খায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ভীষন কষ্ট হয় ।  জানিনা কতজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো একবেলার জন্য হলেও ,,,,,

Friday, July 6, 2018

প্রথম পদক্ষেপ



একা জানলার ধারে বসে । শিয়ালদহ রাজধানী দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে কলকাতার অভিমুখে। সামনে দিয়ে সবুজ ঘাসের মাঠ, মেঠো পথ , কত নাম না জানা গ্রাম, ছোট শহর মুহূর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ফেলে আসা পথের বাঁকে। আমি একা চলেছি আজ । জীবনের এই চল্লিশতম সন্ধ্যায় এসে প্রকৃত পক্ষে একা চলেছি আমি। কোনদিন ভাবিনি আমার ছেলে মেয়েদের ছেড়ে এভাবে চলতে পারবো। কিন্তু কিছু এমন প্রানের টান থাকে যা মাতৃত্বের দায়বদ্ধতা কেও ছাড়িয়ে যায়। মন খুব খারাপ । এই মন কেমনিয়ার কোনো মলম নাই,  নাই কোন পথ্য ।  মনে শুধু একটাই সুর বাজে ,,,, আমি বাড়ি যাবো । আমার অশীতিপর ঠাম্মার কোলে মাথা রেখে সব ভুলে যাবো । ভুলে যাবো আমি কারো মা , কারো স্ত্রী । মনে থাকবে শুধু আমার শৈশব। এমনিভাবেই ধরে রাখতে চাই আমার জীবনদীপ কে , যতই আসুক না কালের হাতছানি,,,, আমি যেতে দেবনা । ভালোবাসা আর আদরে ভরিয়ে রাখবো , মুড়িয়ে রাখবো শ্রদ্ধায় । কেউ যাবে না , কোথাও যাবে না আমায় ছেড়ে । আমি আসছি , আমি আসছি সময়ের গাড়িতে  সওয়ার হয়ে , পড়ন্ত সূর্যের আলোকে সঙ্গী করে ।

ছোটবেলা থেকে রক্ষণশীলতার বেড়াজালে আবদ্ধ জীবন ঠেলে দিয়েছে আমায় এক ভিন্ন দেশে । শিখেছি বাঁচতে, লড়ে আদায় করে নিয়েছি স্থান। সেই অদম্য সাহস কে  কোমরে বেঁধে আমি আসছি , আসছি আমি একা,,,,,। আগত সন্ধ্যার মিষ্টি আওয়াজ আমি শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু অনুভব করতে পারছি প্রতিটি অনু পরমাণু দিয়ে। বাচ্ছাদের খেলা, বড়দের ক্লান্ত পদক্ষেপে বাড়ি ফিরে চলা, রেল লাইন এর ধারে কিছু শ্রমিকদের রান্নার ব্যস্ততা । ওই রান্নার সুবাস কাঁচের জানলা ভেদ করে আমার কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু মনের রসনা তৃপ্তি করে ।

সব কিছুর মধ্যে আমার মন চায় ওই ধোঁয়া ওঠা ইঞ্জিনের চেয়েও আরো জোরে দৌড়ে যেতে। আগল ধরে রাখি মনের , যদি আমায় ফাঁকি দিয়ে যায় । আরে বন্ধু একটু সবুর করো , আমি আসছি , আসছি ওই দিগন্ত্পারের রামধনু সিঁড়ি বেয়ে। আমি আসছি ,,,,

হাতছানি

If you missed the train I'm on
You will know that I am gone
You can hear the whistle blow a hundred miles
A hundred miles, a hundred miles,
A hundred miles, a hundred miles
You can hear the whistle blow a hundred miles"

বাড়ি যেতে মন চায় । কিন্তু মন চাইলেই কি যাওয়া যায় ,,,, একটু আমার ক্লান্ত মন টা ঠাম্মার কোলে মাথা রাখতে চায় ,,, কিন্তু পারছি কই। দায়িত্ব আর মাতৃত্বের দায়বদ্ধতা জড়িয়ে রেখেছে আমার ডানা । যদি দূরত্বটা একটু কম হতো ,,,, সব ওই যদি তে গিয়ে আটকে যায় , কিন্তু জীবন ধারা ঠিকই নিজের গতিপথ পেয়ে যায় শুধু অবুঝ মন একরাশ ক্লান্তি, হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে ঝাঁপ দেয় দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞে । ভুলে যেতে চায় পাওয়া না পাওয়ার হিসেব , দূরে থাকার যন্ত্রনা । হেসে ওঠে ওই বড় মাদারির খেলায় , আবেগের আগুনে উথলে ওঠা অনুভূতি গুলো আবার ছোট ছোট বুদবুদের রূপ নেয় । গড্ডালিকা প্রবাহে এগিয়ে চলে জীবন ।

Friday, May 4, 2018

আমি অমিতা বলছি (২)


 মা চলে গেছেন আজ বেশ কয়েক মাস হল। কোথায় যেন এক অপূরণীয় শূন্যতা,,, দিনের কাজে যেন সেই ভাবে মন লাগে না । দুপুরের ভাত খেতে বসলে পাশের শূন্য আসন টা আরো কষ্ট দেয়। সকাল থেকে উঠে কাজ শুরু হয় । যে হাতে কিছু বছর আগেও খাতা কলম ধরা ছিল , আজ সেই হাত গোবর দিয়ে উঠোন নিকোয়। ঘুঁটে দেয়, গরুর জাবনা দেয় আর অনভ্যস্ত হাতে গরুর দুধ দোয়ায়। যখন বিয়ে হয়ে আসি একটা ট্রাঙ্ক এ আমার যাবতীয় বই খাতা আমার মেজ কাকা দিয়ে দিয়েছিলেন , যদি আমি প্রাইভেটে ম্যাট্রিক দিতে পারি। হয়নি সে সাধ পূরণ। বিশাল সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল । শুনতে হয়েছিল কটূক্তি আত্মীয় দের কাছে পড়াশুনো জানার জন্য। কিন্তু ওই যতদিন মা ছিলেন , উনি যেন সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়াতেন ।
ছেলে টা ছোট , আবার সন্তান সম্ভবা। এমন সময় হল জ্বর । উঠতে পারলাম না সারাদিন । দেখলাম আমার ছেলে টাকে ডেকে কেউ খাওয়ালো না। শুনলাম বড় জা শুধু নিজেদের জন্য ও বাবা শ্বশুরের জন্য রান্না করেছেন। ঘরে যা চিড়ে মুড়ি ছিল তাই খেয়ে পেট ভরালো পিতা পুত্র। এই ভাবেই চললো দিন তিনেক । প্রতিবেশী কাকিমার বদান্যতায় ছেলেটা দুমুঠো ভাত খেতে পেল। আমার শ্বশুর মশাই নীরবে পর্যবেক্ষণ করলেন সমস্ত ঘটনা। চার দিনের মাথায় নিজে দোকানে গিয়ে চাল ডাল আলু কিনে আনলেন। আমায় বললেন , "বউমা উঠোনে যে ধান সিদ্ধ করার উনুন আছে সেখানে রান্না করো । আর আজ থেকে আমি তোমাদের কাছেই খাবো "। জ্বরে আক্রান্ত দুর্বল শরীর আর সংসার ভাঙার কষ্ট নিয়ে প্রথম বার আলাদা রান্না করলাম। সেই রান্না ছিল বড়ই বিস্বাদ।  জীবনে ওরম রান্না কোনোদিন খেতে হয়নি আর ।
***************

শুরু হল জীবনের এক নতুন অধ্যায়। বড় ভাসুর রা জমির সবচেয়ে বড় অংশ নিয়ে আলাদা হয়ে গেলেন। আমার স্বামী বললেন সুখের চেয়ে স্বোয়াস্তি ভালো। কোন এক সকালে দেখলাম যে ঘরে তাঁরা থাকতেন সেটা পুরোটাই খুলে নিয়ে চলে গেছেন সাথে নিয়ে গেছেন শাশুড়ি মায়ের সমস্ত বাসন। নিয়তিও বোধহয় অলক্ষ্যে হেসেছিল ভাগ্যের পরিহাস দেখে । আমার উদার মনা স্বামীর মনে এইসব কান্ড কোনো রেখাপাত করেনা । বরঞ্চ নতুন উদ্যোমে কি করে আমাদের জীবন ধারা কে সুষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাতে মনোযোগ দিলেন। নিজের জমির কিছু অংশ দান করলেন গ্রামে প্রথম লাইব্রেরি তৈরি করতে। মাঠকলের পাঠাগার টা আমার স্বামীর নিজের হাতে গড়ে তোলা। সেখানে অবসর সময়ে বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ও দেওয়া শুরু করলেন। পাড়ার লোকেরা কেউ বাহবা দিল তো কেউ ,,,,,, থাক না কটু কথা ।

*****************

আগেই বলেছি আমার স্বামী প্রগতিশীল ছিলেন। গ্রামে আমাদের বাড়িতে প্রথম চা খাবার রেওয়াজ চালু হয়। সকাল বেলা এক বড় কটেলি তে চা হতো। গ্রামের অনেক বয়স্ক মানুষ আসতেন চা খেতে। চা এর সাথে দেওয়া হত ছোট ছোট ধামা করে মুড়ি। বাড়ির দাওয়ায় বসে চলতো তাঁদের আলাপ আলোচনা।
এখন কিছুটা সময় বাঁচে আমার।ছেলে আর স্বামী বেরিয়ে গেলে ঘরের কাজের শেষে দুপুরবেলা কিছুটা সময় থাকে  যা একান্তই আমার। আমার হাতের কাজের খুব শখ, তাই বানাই সোয়েটার, কুরুশের কাজের  লেস, বাচ্চাদের টুপি মোজা । আর বানাতাম ঘর সাজানোর জিনিস।
বিকেলে রাখাল গরু নিয়ে ফিরে আসতো। আমি সযত্নে লণ্ঠনগুলো পরিস্কার করে তেল ভরতাম। অন্ধকার হওয়ার আগেই ওগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। দিনের আলো থাকতে থাকতে যতটা সম্ভব কাজ গুছিয়ে নিতে হতো। রাতে লাইব্রেরি থেকে নিয়ে আসা নভেল পড়াটা আমার নেশা ছিল। মনে হতো এক অন্য জগৎ খুলে গেছে আমার সামনে।
*****************
বর্ষায় অনেক সময় ফুটো টালির ফাঁক দিয়ে জল পড়তো। বালতি হাঁড়ি বসিয়ে জল ধরতাম । এইসময় সাপের গর্ত গুলো জলে ডুবে যেত বলে ওদের যত্রতত্র দেখা যেত। সকালে উঠে উনুন ধরাতে গেছি দেখি রাতের পোড়া ছাইয়ের ওপর সাপ কুন্ডলি মেরে আছে , বা ধান সিদ্ধ র হাড়িতে , কিংবা মশারির চালে । পরিবারে এখন বাচ্চার সংখ্যাও বেড়েছে, বেড়েছে তাই আশঙ্কা। এমন ও দেখা গেছে সন্ধ্যায় বাচ্ছারা লন্ঠনের আলোয় দুলে দুলে পড়ছে আর তাদের পিছনে ছোট ছোট গোখরোও ফনা তুলে দুলছে। সে দিন গেছে চলে ,,,,,

**************

বর্ষার প্রকোপ কোমলে বাড়ির ছেলেরা যেত ধান ক্ষেতে , চাঁদনী রাতে । বড় বড় সড়কি, বল্লম আর জাল নিয়ে । সকালে যখন উঠলাম দেখলাম উঠোন ভেসে যাচ্ছে মাছে। যেসব মাছ জিওল তাদের আলাদা করে মেছলায় রেখে দেওয়া হতো জল দিয়ে । বড় মাছের ভাগ যেত আসে পাশের আত্মীয় স্বজনের বাড়ি। আর বেঁচে যাওয়া চিংড়ি ছোট মাছ গুলোকে ধুয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হতো বড় বড় কুলোর উপর । রোজ চলতো রোদ খাওয়ানোর পালা। কিছু তাজা কুচো/মেথি/ধেনো চিংড়ি আর ছোট মাছ পেঁয়াজ রসুন লঙ্কা কুচি  কালো জিরে দিয়ে কড়াই এ অল্প তেলে নেড়ে তারপর নারকেল দিয়ে সিলে বাটা হতো। সেই বাটায় কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে ভাত খাওয়া হতো। সত্যিই কি যে দিন গেছে চলে ফিরে আর আসিবে না ,,,,,,,,,

তখন তো ফ্রিজ ছিল না , তাই কিছু দেশি পদ্ধতিতে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা হতো। যেমন বেশি মাছ হলে , বিশেষত ইলিশ হলে মাটির হাড়িতে একপ্রস্থ নুন বিছিয়ে মাছ রাখা হতো। আবার তার উপরে নুন দেওয়া হতো। মাটি খুঁড়ে হাড়িটা গলা অব্দি পুঁতে দেওয়া হতো । উপরে যথাযত ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন দশেক চলে যেত । যতটা দরকার বের করে নিয়ে হালকা গরম জলে মাছ ধুয়ে রান্না করা হতো।

*************

জীবন সর্বদাই চলনশীল । কারো জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। মনে পড়ে এক পুজোয় আমার ছেলে তার  বোনের হাত ধরে গ্রামের ঠাকুর দেখতে যাচ্ছে।  মেয়ে আমার একটু সাজুগুজু করতে ভালোবাসে। তা সে নিজের জামা সামলাতে ব্যস্ত। কিন্তু ছলনাময়ী ভাগ্য দেখছিল আর হাসছিল মিটিমিটি। কিছুদিন আগেও বৃষ্টি হয়ে গেছে, মেঠো রাস্তা তাই আরো পিচ্ছিল । জামা সামলাতে গিয়ে দাদার হাত ছেড়ে একাই চলছিল সে,,,,, হঠাৎ পপাত ধরনী তল ।  এক হাঁটু কাঁদায় সে ডুবে গেছে। সবাই ছুটে এসে তাকে টেনে বার করলো। দেখা গেল নতুন জুতো জোড়া ছিঁড়ে কাদাতেই রয়ে গেছে। মেয়ের কান্নায় পুজো দেখা মাথায় উঠলো সবার ।
**********************
আলাদা হবার পর প্রায় এক যুগ কেটে গেছে । ছেলে মেয়েদের কিভাবে ভালো করে পড়ানো যায় সেই চিন্তাই আমার স্বামীকে ভাবিয়ে তুলেছে। শ্বশুর বাবা মারা গেলেন । ভিটের টান এর থেকে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ এর চিন্তা বড় হয়ে উঠলো। স্টেশনের কাছে একটা ছোট জমি কিনে সেখানে বানানো হল অন্নদা ভবন ,  আমার শ্বশুর বাবা অন্নদা প্রসাদের নামে। সালটা ছিল ১৯৬১ । তিন ছেলে মেয়ে আর স্বামীর হাত ধরে শুরু হল আবার নতুন করে আমার পথ চলা।
**************

Wednesday, April 25, 2018

#justice

I really don't understand why do we need a name, a religion or a caste to rise for protest. Why we should wait for Asifa to die ....why can't we stand up before that...Asifa, not the first one to be brutalized...but we wait for the time and let her die ... In surat, an unidentified girl died of 86 wounds n sexual assault ...a lill girl got molested inside the classroom... a woman gang-raped...but none standing up for them .. neither taking names ...be it a Dalit or Muslim ... let's make it a piece of news...why why...the pain is the same ...for the victim and the parents ...and the culprits roam free... We didn't learn anything from Nirbhaya ..that's why Asifa and so many others dying.... If u are standing up pls do continue to do that ... don't wait for a name..Stand up before it is too late. Stand up before those creepy hands snatch away your dear ones ...It's time to arise and protect our children, our future.

#justiceforAsifaandothers

Monday, April 23, 2018

আমি অমিতা বলছি


********************

প্রাক স্বাধীনতা যুগে জন্মেছি। মিছিল, বিদ্রোহ, বিপ্লব আর বোমারু বিমানের আসা যাওয়ায় কেটেছে আমার শৈশব। বাবা মা থাকতেন গ্রামের বাড়িতে । আমি আর আমার বাকি তিন ভাই বোন দাদু ঠাকুমা আর কাকাদের সাথে ভবানীপুর এর বাড়িতে থাকতাম। দাদু আবগারি অফিসে কাজ করতেন , কাকাদের কেউ কলেজ পড়ুয়া তো কেউ কর্ম প্রত্যাশী। এরই মাঝে গোরাদের যখন ধরপাকড় বেড়ে যায় , দেখি কাকারা কোথায় যেন চলে যায় । ঠাকুমার রাত গুলো আমাদের আঁকড়ে ধরে কেটে যায়। পড়াশুনো করতে আমার বরাবর ভালো লাগতো। ভর্তি হলাম ভবানীপুর গার্লস স্কুলে। দুই বেনী ঝুলিয়ে বোনের হাত ধরে স্কুলে যেতাম।  পাড়ার ছেলে মেয়েদের সাথে মিলে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা, ঝুলন সাজানো , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা আর ও কত কিছু করতাম । দিনের শেষে বাড়ির ছাদে বসে পাড়ার কোনো ঠাকুমার কাছে গল্প শোনা , ছুটির দুপুরে সবাই মিলে আচার খাওয়া  -- আজ এইসব মনে পড়লে মনে অনাবিল আনন্দ জাগে আবার অবাধ্য চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যায়। যাইহোক , আমাদের জীবন এর ছন্দপতন হল ,,, দাদুর কাছে আসলো চিঠি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে গোরারা ছাউনি করবে । কি কান্ড , তাহলে গ্রামের মানুষের দুর্গতির সীমা থাকবে না। বাবা, দাদু , কাকারা সবাই চিন্তিত। তখন দাদুর অফিসের এর এক গোরা সাহেবের পরামর্শ এ আমরা সবাই গ্রামে ফিরে গেলাম। গোরাদের অফিসে দাদু চিঠি পাঠালেন , যাতে আমাদের ভিটে ছাড়া হতে না হয়। পরিদর্শন করতে এসে যখন দেখলো আমরা সবাই ওই বাড়িতে আছি ওরা দাদুর আর্জি মেনে নিল। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও সেদিনগুলো আমাদের কাছে পাহাড় সমান মনে হয়েছে। সব মিটে যেতে আবার ফিরে এলাম শহরে। আবার স্কুল। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি , সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে ঠাকুমার সাথে কাজ করছি, আমার সেজ কাকা এক হাঁড়ি মিষ্টি নিয়ে ঢুকলেন । হঠাৎ জানতে পারলাম আমার বিয়ের কথা চলছে। সেকি তাহলে আমার পড়া শুনো।
যথা নিয়মে পাত্রপক্ষ দেখে বিয়ের নির্ঘন্ট স্থির করে গেলেন। দুই বিনুনি দুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার পড়লো ইতি।
থাকতাম ভবানীপুর এর মত শহুরে জায়গায় , বিয়ে হল মাটিকলে । এয়ারপোর্টের কাছে হলেও অজ গ্রাম। এমবাসাডার এ চেপে বিদায় হয়ে আসলাম । কিন্তু ওই গ্রামে ঢোকার মুখে এসে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল । নতুন বউ, অজানা অচেনা পরিবেশে এক গলা ঘোমটা দিয়ে স্বামীর সাথে শুরু হল আমার দীর্ঘ পথ চলা।
*********
গ্রামের এক প্রান্তে মায়ের থান। আগে ওখানে গিয়ে  প্রনাম করে তারপর নতুন বউয়ের শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ। সব মেয়েই কম বেশি ভয়ে থাকে নতুন শাশুড়ি কে নিয়ে । কিন্তু আমার শাশুড়ি মা সেই ভীতি প্রদর্শনের কোনো চেষ্টা করেননি, বরঞ্চ একটি নতুন মা পেয়েছিলাম তাঁর মধ্যে। গ্রামের এমনি হাল ছিল যে জুতো বগলদাবা করে বা পারলে মাথায় করে নিয়ে বেশ কিছু রাস্তা চলতে হতো। তারপর নিকটবর্তী পুকুরে পা ধুয়ে জুতো পরে অফিস যেতে হতো আমার স্বামী ও অন্যান্য সবাইকে। গ্রামে আমি ছিলাম একমাত্র পড়া লেখা জানা বউ। আমার স্বামী হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি করতেন অবসর সময়ে। আমিও শিখেছিলাম বেশ। গ্রামে কারো জ্বর হলে বিশেষত মহিলা যদি হন, আমার ডাক পড়তো। থার্মোমিটার কে গ্রামের বাসিন্দারা বলতো জ্বর মাপা কাঠি।
গ্রামে থাকলেও আমার স্বামী প্রগতিশীল ছিলেন তাই ওই দূর গ্রামে গিয়ে ও আমার মনের জানালা বন্ধ হয়ে যায়নি, বরঞ্চ আরো নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়েছিল। শখ করে আমার নাম রেখেছিলেন অমিতপ্রভা । ভালোবাসার একটুকু ছোঁয়া লাগে ।
********

আমার শাশুড়ি মা সব সময় বলতেন দু মুঠো চাল বেশি নেবে বউমা। কেউ যদি আসে অভুক্ত না যায় । সাত সকালে উঠে বিশাল এক হাঁড়ি ভাত, ডাল আর কোন একটা তরকারি আর মাছ বানানো হতো । যারা অফিস , স্কুলে যাবে তারা খেয়ে বেরিয়ে গেলে মাঠে যারা কাজ করতো তাদের জন্য খাবার পাঠানো হতো। আবার দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি চলতো। অনেক সময় হতো কি , অনাহুত অতিথির সংখ্যা এত বেশি হতো আমাদের মহিলাদের জন্য ভাত ছাড়া কিছু বেঁচে থাকত না। তাই বলে কি আমরা অভুক্ত থাকতাম, কদাপি না। মা মাচায় ফলে থাকা পটল, সিম , ঝিঙে যা পেতেন নিয়ে প্রায় নিভন্ত উনুনে দিয়ে দিতেন । আমরা স্নানাদি সেরে যতক্ষন এ আসতাম সেই সবজিগুলো পুড়ে ভর্তার উপযোগী হয়ে যেত । ভাতে সেই পোড়া সবজি  সর্ষের তেল কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে মেখে ,,,, থাক না আস্বাদন টা জিভের ডগায় লেগে থাকুক।
আবার কোনো সময় , চুবাড়ি তে একটু ভাত ছড়িয়ে পুকুরের শেষ ধাপে রেখে দেওয়া হতো। কিছু ক্ষণ পর এক ঝটকায় তুলে নিলেই চুবাড়ি তে পাওয়া যেত ছোট চিংড়ি, চিতি কাঁকড়া, ছোট মাছ । সব গুলোকে এক সঙ্গে কেটে বেছে নুন হলুদ , কাঁচা মরিচ, কাঁচা সর্ষের তেল , একটু আলু কুচি , পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মেখে  উনুনে বসিয়ে দেওয়া হতো। সেই স্বাদ আর পাই না । সেই দিনগুলোতে অনেক কষ্ট ছিল। বোতাম টিপলেই ফ্যান চলতো না , আলো জ্বলত না। জল আনতে কাঁখে ঘড়া নিয়ে আধ মাইল হাটতে হতো , বিকেল বেলায় নিয়ম করে লন্ঠন পরিষ্কার করতে হতো। সাপের ভয় , ভাম , শেয়ালের ভয় ও  ছিল খুব , কিন্তু ,,,, কোথায় একটা শান্তি ছিল। গ্রামের বউরা মিলে বাঁশ বাগানে গিয়ে অরণ্য ষষ্ঠী পালন করা , হইহই করে ইতু পুজো করা ,,,,কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
**************

মনে পড়ে, আমার ছেলের সেই ছুটতে ছুটতে মা মা করে চিৎকার । ভয় পেত ,,,ওই উঁচু বাঁশের ঝাড়ের মাথা গুলো যখন হওয়ায় দুলতো ,,,খুব ভয় পেত ।আর আমিও ওকে আশ্বাস দিতে ওর নাম ধরে ডাকতাম ।  এই ভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন । কিন্তু বিধাতা আমাদের নিয়ত পরীক্ষা নিতে থাকেন।
এরই মাঝে হারিয়েছি একটি সন্তান ,,,মস্তিষ্কের জ্বরে । ডাক্তার দেখিয়েও কিছু করতে পারিনি। বুকের মাঝে সেই ছয় মাসের সন্তানের জন্য আজো রক্ত ঝরে । শোক নিয়ে পথ চলা যায় না । তাই জীবন এগিয়ে চলে আপন স্রোতে। শাশুড়ি মাকে এক সন্ধ্যায় চন্দ্র বোড়া সাপে কাটলো। সবাই ছুটে এলো, কোন ওঝা ভালো ঝাড়তে পারে তাকে ডেকে পাঠানো হল । সেদিন আমার স্বামী মাইনে পেয়েছিলেন, পকেটে টাকা নিয়ে আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি অগাধ আস্থা নিয়ে মা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেন । কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস , আমার বড় ভাসুর ও গ্রামের বাকি মাতব্বররা নিয়ে যেতে দিলো না মা কে । রাত গড়িয়ে ভোর হল কিন্তু নিভে গেল একটা সুন্দর জীবনদীপ। আমার স্বামীর আক্ষেপ আজ ও আছে টাকা থাকা সত্ত্বেও মা কে না বাঁচাতে পারার । আমিও তার ভাগিদার । এই জীবনের শেষের সাথে সাথে সেই আক্ষেপের ও শেষ হবে।
মায়ের যাবার পর ধীরে ধীরে একান্নবর্তী সংসারে যেন ফাটল ধরলো। সেই ফাটল দিয়ে বিভেদের নোনা জল ঢুকে দুই ভাই আর তাদের সংসার আলাদা হল , আলাদা হল পথ চলা।
#ঠাম্মারগল্প
অনিন্দিতা

Wednesday, February 21, 2018

আমার মাতৃভাষা




"মোদের গরব মোদের আশা" সে আমার মাতৃভাষা-- বাংলা ভাষা। সবাই বলে কি মিষ্টি নাকি আমার ভাষা, যেন রসগোল্লা। কতই না মাতামাতি , কত প্রভাত ফেরী, কত গান কত আবেগ। দাঁড়ান , দাঁড়ান , বেশি ভেবে ফেলেছেন। এই উল্লাস , এই গর্ব ওই এক দিনের । আজকের ২১ফেব্রুয়ারি, দিনটা ভাষা শহীদ দের রক্তে রঞ্জিত এক প্রজন্মের লড়াইয়ের স্মরণ দিন । কিন্তু তার গুরুত্ব আজকের প্রজন্ম কোথায় দেয়? আজকের দিনে কটা সেলফি তুলতে পারবেন, কাকে ট্যাগ করতে পারবেন, বন্ধুদের থেকে লাইক কমেন্ট কত বেশি পাবেন সেটাই বিশাল চিন্তা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। তাদের বাংলা বলতে লজ্জা লাগে। "ওমা ইস, কি ব্যাকডেটেড। এখনও  বাংলায় কথা বলিস" --- এমন ধিক্কার যেন শুনতে না হয় বন্ধুদের কাছে। তাই প্রানপন প্রচেষ্টা আধুনিক হওয়ার। তারা জানে না , যে নিজের মাতৃভাষা র সম্মান করতে পারে না, তাকেও কেউ সম্মান করে না। কবি মাইকেল বুঝেছিলেন সময় থাকতে , তাই আমরা পেয়েছি মন্দাক্রানতা ছন্দ, পেয়েছি মেঘনাদ বধ কাব্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবার প্রিয় ,কিন্তু আজকের প্রজন্ম কতটুকু হেঁটেছে  গোরার পদক্ষেপে কিংবা গা ভাসিয়েছে অমিত লাবণ্য এর প্রেমের ভেলায় । কোথায় সেই ভাষার কারুকাজ , কোথায় সেই প্রেমসিক্ত ভাষা যা হৃদয়ের গভীরতম তলদেশ থেকে উঠে আসে আর মনকে করে উদাসী বাউল।
বাংলা বানান আজ নিজের স্বরূপ হারিয়েছে। অবক্ষয় এর শুরু অনেকদিন । আজ তার অস্থিমজ্জা সার অবস্থা। হে নবীন, রঙিন দুনিয়ার মায়া জাল থেকে বেরিয়ে একটু দেখুন না । নিজের ভাষার বাগান টাকে আবার সাজিয়ে তুলুন। আজ যদি ভাষা আন্দোলন এর দামামা বাজে কেউ কি এগিয়ে আসবেন ফেসবুক আর ট্যুইটার ছেড়ে , বুক পেতে নেবেন ওই নাম না লেখা বুলেট ? নাকি শুধু অনলাইন পিটিশন ফাইলে আবদ্ধ থাকবে ভাষার বেঁচে থাকার লড়াই ?
যারা নির্দ্বিধায় বুক পেতে দিয়েছিল উপেক্ষা করে তাদের মায়ের ডাক , বাঁচাতে চেয়েছিল তাদের মাতৃভাষা তারা কি নিতান্তই বোকা ছিলেন ? জানি না। আমি নিজে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী , আমার কাছে এই ভাষা শুধু ভাবপ্রকাশের মাধ্যম নয়। সে আমার অস্তিত্বের প্রমান, আমার বেঁচে থাকার রসদ। প্রবাসে আছি বহুদিন। সন্তানদের বাংলাভাষী করেছি, কিন্তু পারদর্শী করে তুলতে পারিনি। তথাকথিত স্কুলের পড়ার চাপ তাদের সেই অবসর দেয় না, আর আমার অক্ষমতা আমায় জর্জরিত করে। কিন্তু যারা বাংলায় আছেন তাদের কেন এই অপারগতা? আসুন না, আমরা সবাই মিলে এক শপথ নিই, বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর। দরকার ছাড়া ইংরেজি, হিন্দি বলবো না। নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা হোক একমাত্র সাধন। কেউ বাংলা বললে তাকে ছোট করব না, বের করে দেব না কোন পাঁচতারা হোটেল থেকে। যেখানে দেখব অপমান সেখানে বলবো" হোক কলরব" ।  নাহলে যে ব্যর্থ হবে ওই ছেলেমেয়েগুলোর জীবনদান। আজ কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত "মাগো, ওরা বলে" কবিতাটি না স্মরণ করে পারলাম না । পড়ে দেখুন , যদি মনের কোণে এতটুকু স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে, তাহলে তাকে নিভে যেতে দেবেন না । তাকে বানিয়ে তুলুন মশাল , শুদ্ধ হোক আত্মা , শুদ্ধ হোক ভাষা।
"মাগো , ওরা বলে"

"কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি—
খোকা তুই কবে আসবি!
কবে ছুটি?’

চিঠিটা তার পকেটে ছিল,
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

‘মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা, তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরী হচ্ছে।
তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ী ফিরবো।
লক্ষ্মী মা রাগ ক’রো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।’

‘পাগল ছেলে’ ,
মা পড়ে আর হাসে,
‘তোর ওপরে রাগ করতে পারি!’

নারকেলের চিঁড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে
এটা সেটা আরো কত কি!
তার খোকা যে বাড়ী ফিরবে!
ক্লান্ত খোকা!

কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝ’রে প’ড়েছে ডাঁটা;
পুঁইলতাটা নেতানো,—
‘খোকা এলি?’

ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠোনে, উঠোনে
যেখানে খোকার শব
শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন,
মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের।
তারপর,
দাওয়ায় ব’সে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে! কখন আসে!

এখন,
মা’র চোখে শিশির ভোর,
স্নেহের রোদে
ভিটে ভরেছে।"


অনিন্দিতা

Friday, February 16, 2018

স্মৃতি বোঝাই গরুর গাড়ি



                            



ছোটবেলার সবচেয়ে মজার দিন ছিল বাংলা নববর্ষের দিনটা। সেদিন নিজেকে বেজায় বড়লোক মনে হতো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতেই মা এর সাবধান বাণী," আজ যেন দুস্টুমি করবিনা। আজকের দিনে বকা ঝকা করতে নেই। আমায় যেন ....." ব্যাস বাকি কথা পরে হবে। বাড়িটা এমনিতেই খাবারের গন্ধে মম করছে। তাড়াতাড়ি করে স্নান করে নতুন জামা পরে ঠাকুর প্রনাম করে বাড়ির সব গুরুজনকেও প্রনাম করা আমাদের অলিখিত নিয়ম।আজ ঠাকুর ঘরে ও যেন এক মায়াময় গন্ধ ছড়িয়ে আছে।  আজ প্রসাদে শুধু বাতাসা নয়, সাথে আছে সাদা গুজিয়া, পাঁচ রকমের ফল। আহা সে বড় ভালো লাগার জিনিস। ততক্ষন সাদা সাদা ফুলকো লুচি, আলুর তরকারি কালো জিরে ফোড়ন দিয়ে , সাথে মিষ্টি- রসগোল্লা, জিলিপি সবাই অপেক্ষা করে আছে। কি আনন্দ। বাববা বাঁচা গেল,  ওই বিচ্ছিরি দুধ টাও আজ বাদ। খেয়ে নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি, মা এর ডাক শুনতে পেলাম, " আজ কি একটুও পড়া হবে না, বিকেলে নাহলে মামাবাড়ি র মেলায় নিয়ে যাব না" ।  মেলা, সেকি মিস করা যায়। অগত্যা  ব্যাজার মুখে পড়তে বসা।  সময় যেন থমকে দাঁড়ায়। শামুকের গতিতে সময় এগিয়ে চলে। আবার দুপুরে একপ্রস্থ ভালোমন্দ খাওয়া চলে। কিন্তু আমার মন তখন চলে গেছে  মেলায়। দুপুরের একটু পরেই মায়ের হাত ধরে চললাম মামাবাড়ি।


মামাবাড়ি ভারী মজা- সেখানে আমি একমাত্র নাতনি , একমাত্র ভাগ্নী, সবার ভীষণ আদরের।  মামাবাড়ির ঠিক পাশেই এক পুরানো কালী মন্দির। সেই মন্দিরের বিশাল প্রাঙ্গণে মেলা বসে। ছোট নাগরদোলা, মেরি গো রাউন্ড , বন্দুক চালানো এইগুলো তো ছিলই। কিন্ত সবচেয়ে আমার ভালো লাগতো মাটির পুতুল, মাটির ঠাকুর , মাটির তৈরি রঙ বেরঙের ফল-সবজি  আরো কত কি। মামাবাড়ি তেও সবাইকে প্রনাম করার পালা । চার মামা, দুই মামী, দাদু দিদা। মাসীরাও আসতো অনেক সময়, তখন যেন আরো চাঁদের হাট। সকাল থেকে অনেক প্রাপ্তিও হল আমার , যত জন কে প্রনাম করলাম সবাই টাকা দিয়েছে মেলা দেখার । কেউ ১ তো কেউ ৫ আবার কেউ ১০ ও। ওই সময় এই টাকাগুলোর মূল্য অনেক। আজ আমি তাই অনেক বড়লোক। ছোট ভাই বোনদের নিয়ে মেলায় যেতাম । নিজে হাতে জিনিস কিনতাম। আজ আমার অতি রক্ষণশীল মাও আমায় ছেড়ে দিত। কি আনন্দ, কখনো ১ টাকার ফুচকা তো কখনো ৫০ পয়সার আলু কাবলি। স্বাদ যেন আজ ও মুখে লেগে আছে। কি বড় বড় পাঁপড় ভাজা, আমসি, মিষ্টি গজা , হজমি গুলি- সব যেন হারিয়ে গেছে । আমি প্রতিবার মেলা থেকে একটা ঘাড় নাড়া বুড়ো কিনতাম, আর কিনতাম ঠাম্মার জন্য একটা ঠাকুরের মূর্তি। এই দুটি জিনিসের ব্যতিক্রম হতনা। আর কিনতাম ঝুলনের জন্য আরো কিছু খেলনা, যেমন গরুর গাড়ি, ছোট ছোট পাখি - এমনি আরো কত কি।



বাড়ির পাশে বলে কতবার যে মেলায় দৌড়ে চলে যেতাম তার ইয়াত্তা নেই। সময় যেন এইসময় ঘোড়ায় চড়ে ছুটতে থাকতো। ভারাক্রান্ত মনে আবার বাড়ি ফিরে আসা। আজ হাতে অনেক টাকা আসলেও নিজেকে এতটুকু ধনী মনে হয় না। নেই সেই ছোটবেলার সরলতা, সেই নিষ্পাপ ভালোবাসা। মেলায় আসা লোকজনের সঙ্গে মিশে যাবার অনাবিল আনন্দ। সেই ১,২ টাকায় কেনা জিনিসের যে সুখ আজ তা ব্র্যান্ডেড জিনিসে নেই। আজকের নববর্ষ পালন অনেক এটিকেট মেনে হয়। এখন ছোটরা সবাইকে প্রনাম করতেও চায়না । আসলে আসে পাশের মানুষের প্রতি তারা হারাচ্ছে বিশ্বাস, তাই শ্রদ্ধা ব্যাপারটাও কোথাও হারিয়েছে। এই প্রজন্মের সেটা দোষ না। আমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ কে একটা সুন্দর বর্তমান দিতে অক্ষম। আমি নিজেও  খুঁজে পাইনা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আন্তরিক ব্যবহার। ফেলে আসা দিন গুলো বড়ই বেদনা দেয় মাঝে মাঝে। আগামী বছর গুলোতে সে বেদনা বাড়বে বই কমবে না।






Friday, February 9, 2018

Collage#Happiness

Happiness is the smile that appears when your love walks through the door
It's the fact that everyday you love her even more
Happiness is smiling when nothing goes your way
Happiness is family when you've had a tired day
Where do you find happiness do you look up or down?
You find it in the mirror at the absence of a frown
Happiness can be described in so many different ways
So let's just hope when it finally comes it will never go away

by Nesean Coombs



_________

Happiness is elusive like the wind
Coming and going like migrating birds
And sound of echoing peals of church bells.

I would keep love safe and strong
Held fast within my heart
Never lost to furies of a purple storm.

Once, I was happy and royal with my lover
Not knowing it was supreme
And through folly have lost all to loneliness.

by Colin Ian Jeffery

__________________


Happiness is one of the many emotions
maybe the greatest off all
it can make you feel all jumpy inside
a first kiss, first love
its all to do with happiness.
but yet happiness never gets thanked
for every thing it has done for us
so im saying thank you for bringing me steven, amy, fayeness, india and everyone else
that means something to me
thank you happiness

by Naomi Burdett



_______________

A moment of happiness,
you and I sitting on the verandah,
apparently two, but one in soul, you and I.
We feel the flowing water of life here,
you and I, with the garden's beauty
and the birds singing.
The stars will be watching us,
and we will show them
what it is to be a thin crescent moon.
You and I unselfed, will be together,
indifferent to idle speculation, you and I.
The parrots of heaven will be cracking sugar
as we laugh together, you and I.
In one form upon this earth,
and in another form in a timeless sweet land.

by Mewlana Jalaluddin Rumi

Thursday, February 8, 2018

কিছু মনের কথা

আজ সকালে ছেলের জন্য ডিম পাউরুটি বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা ডিমে বেশ কিছুটা রক্ত কণিকা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেই ডিম টা ডিসকার্ড করতে গিয়ে মনে পড়ল , এগুলো অনেকেই খায় , এবং ভ্রূণ সমেত ডিম কিছু জায়গায় ডেলিকেসি। এতে খারাপ লাগার কিছু নেই। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ সেটা একান্তই আমার। যার যেটা ভালো লাগে সে সেটাই খাবে বা পোষ্ট করবে। কিন্তু কিছু লোক আছেন যারা মরাল পুলিশিং করতে ওস্তাদ মানুষ। ইস এটা কেউ খায় ,,,এমন নাক শিটকানো টাইপ আরকি। এক টা ছোট্ট ঘটনা বলি, তখন আমি সদ্য , সারদা মিশন কলেজ থেকে পাস করে দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া কলেজে ভর্তি হয়েছি । দুটো কলেজের পরিবেশে খুবই পার্থক্য। কিন্তু , জামিয়াতে আমি কোনদিন কোন ধর্মীয় টানাপোড়েন এর সম্মুখীন হয়নি। আমার কলেজের পাশে কিছু খাবার দোকান ছিল যারা দারুন বিরিয়ানি বানাতো। বাঙালি পেট , বিরিয়ানি ছাড়ি কি করে। চিকেন ও মটন বিরিয়ানি দুটোই খেতাম । হঠাৎ একদিন জানলাম মটন বিরিয়ানি টা আসলে গরুর মাংসের। তার আগে আমি কোনদিন খাইনি। এবার পড়লাম বিপাকে, যাঃ তাহলে কি আমার জাত গেল?  জানেন , আয়নায় অনেক বার নিজেকে দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম, ওই জাত যাবার ব্যাপারটা ঠিক কি হয়? শেষে আমার ঠাকুমাকে শুধালাম, ঠাম্মা আমার কি জাত গেছে? আমি কি আর পুজো করতে পারবোনা? ঠাম্মা আদর করে বলল, জাত টা কি একটা জামা যে নোংরা হলে ছেড়ে ফেলবি। জাত টা হচ্ছে তোর পরিচয়, যে তুই কত বড় মানুষ। তোর মনুষ্যত্ব বোধে তোর জাত চেনা যাবে। আর ঠাকুর কে মন থেকে পুজো দিস, আড়ম্বরে ঠাকুর কে পাওয়া যায় না। সত্যি কথা, কই ঠাকুর কে আমি তো কোন মন্দিরে পাইনি, পেয়েছি তাঁকে প্রকৃতিতে, মানুষের মধ্যে। কেদারনাথ এর হিমশীতল রাতে অনুভব করেছি তাঁকে । আজ তাই হাসি পায় নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য। নিজেকে ঠিকঠাক মানুষ করে তুলতে হবে, নিজের সন্তানদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে সহনশীলতা। কেন এত রাগ? আছে দুঃখ আছে মৃত্যু , তাহলে কেন রেষারেষি, অন্যকে ছোট করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা?   লোকে কি খাবে , কি পড়বে সেটা ঠিক করার দায় আমার না। কিন্তু রাস্তায় কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করাটা আমার নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করি। সেখানে আমার দায়বদ্ধ তা আছে ।