Tuesday, July 31, 2018

একটি খোলা চিঠি

প্রিয় পাবলো,
কেমন আছো তুমি  ? জানি তুমি খুব ব্যস্ত। তোমার আঁকা আজ বিশ্ববন্দিত। কত জায়গায় তোমার চিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে । তোমার চারপাশে কত মানুষের ভিড়। সেই ভিড়ের মাঝে আমাকে কি কোনোদিন খুঁজেছো তুমি? তোমার ম্যাডলিন , তোমার প্রথম মডেল কে , তুমি কি বিস্মৃতির গলিতে ছেড়ে এসেছো, পাবলো? তোমাকে পেয়েও না পাওয়ার কষ্টে পড়ে থেকেছি আমি  মাটি কামড়ে , বাঁচার লড়াইয়ে। নখের আঁচড়ে লিখেছি আমার বিরহ যাতনা-

বেণীমাধব, ও বেণীমাধব
কত'ই না ডেকেছি তোমায়,
এই নামের আড়ালে
লুকিয়ে আছে তোমার পরিচয়।
পারি না তোমায় তোমার নামে ডাকতে,
ভয় হয় যদি লোকে জেনে যায়।
বেণীমাধব, তাই দিলাম তোমার নাম,
হইনি আমি পাড়ার সেলাই দিদিমনি
দিয়েছি আমি পাড়ি সুদূরের পথে
মনের গভীরে তলিয়ে গেছ তুমি
ডুব দিয়ে তুলে আনি কিছু স্মৃতির মণি
নেই তার দাম কারো কাছে,
তবু যদি জানতাম তুমি আছো আমার'ই পাশে।
না তুমি, না তোমার ছায়া
সব'ই রইল অধরা
জীবনের গোধূলি বেলায়
যদি হয় আর একবার দেখা,,,
বেণীমাধব, একটি বার সব কিছু ভুলে
সব বেড়াজাল ভেঙ্গে একবার মিলিয়ে দাও
তোমার আমার জীবন রেখা
বাকী টুকু থাক নাই'বা হলো আঁকা।
জীবনের অনেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছি। বর্তমান জীবন অনেক দিয়েছে আমায় ,,,টাকা পয়সা, সোনার গয়না , দেশে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া ,,,,সামাজিক প্রতিপত্তি - আজ থেকে তিরিশ বছর আগে যা তোমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল । তুমি পাত্র হিসেবে আমার মায়ের চোখে গ্রহণীয় হয়ে উঠতে পারোনি পাবলো। তোমার স্বপ্ন মেদুর চোখ , গ্রিক দেবতার মতো চেহারা আমাকে পাগল করেছিল , কিন্তু আমার মায়ের চোখে শুধুই ছিল অশনি সঙ্কেত। থাক আজ সেসব কথা। আসলে মনের মধ্যে আজ আমার কথার ফুলকি । তোমায় উজাড় করে না বললে যে আমার ভালোবাসার গল্প অধরাই থেকে যাবে। ইছামতির তীরে বসে তোমার আঁকা সেই ছোট্ট বাচ্চার চারকোল পোট্রেট আজও আছে আমার কাছে । ভেবেছিলাম তোমার সাথে বাঁধবো যখন ঘর , সাজাবো যতনে ,,,,চিকনের পর্দা , পোলকা ডটের চাদর , অগুরুর গন্ধ ,,,একটা ফুলদানি রজনীগন্ধার তোড়ায় সাজানো,,,,,শুধু তোমার আসার অপেক্ষা। তোমার ঘামে ভেজা শরীরের গন্ধ , সিগারেটের গন্ধ - সব কিছুতেই ভালোবাসা ,ভালোবাসা।
উফফ দম টা যেন বন্ধ হয়ে আসছে পাবলো। আমার হাতে সময় বড়ই কম। তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল

আজো তোমার অপেক্ষায় গুণে যাই দিন।
জানতে চাও কোথায় আছি...
******
ছেড়ে আমি যায়নি তোমায়
শুধু নদীর স্রোত ছিল প্রতিকূল
সময়ের আলিঙ্গনে জমেছে ধূল।
ভুলে আমি যায়নি তোমায়
রঙিন  করেছি মন তোমার রঙে ,,,,,,।
তোমার নিশ্বাস আজো পাই ঠিক
আমার কানের পাশে
শিহরে ওঠে মন, শরীর-প্রাণ
তোমায় ভুলে যায়নি ,,,,, ।
সব ধূলো মুছে দেব--- যদি তুমি আজো আসো
দু-হাত বাড়িয়ে দেব--- জড়াবো আমার বাহুপাশে।
স ্স্কারের বেড়াজাল করেছে রাস্তা পিচ্ছিল
যত'ই তুমি বাড়াও হাত
পৌঁছাতে দেবেনা আমায় ওরা
রাস্তা বড়'ই  সঙ্কিল।

না না ,,,,ছন্দ মিলছে না । তাল কেটে যাচ্ছে কথার । সময় নেই ,,,আর সময় নেই । আচ্ছা পাবলো , আজো কি তুমি আমায় ভালোবাসো?! নাহ উত্তরের অপেক্ষা করিনা। কারন জানি যখন তুমি এই চিঠি পড়বে ততক্ষনে আমি সমস্ত জাগতিক মায়া কাটিয়ে  পোঁছে যাবো না-মনখারাপ এর দেশে। জানো পাবলো, এই মেশিনগুলো আমায় যে একমুঠো শ্বাস ভিক্ষে দিচ্ছে ওরাও জানে আমার ভিতরটা কত ফাঁকা। তাই সারাদিন পাম্প করেও ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছায় না । হারিয়ে যায় মাঝ পথে। তোমায় আমার মনের না বলা কথা আজ জানাতে পেরে অনেক হালকা লাগছে । নিজেকে মনে হচ্ছে রাস্তা শেষে আস্তানায় ফেরা কোনো ক্লান্ত পথিক
" 'Tis very sweet to look into the fair
         And open face of heaven,—to breathe a prayer
Full in the smile of the blue firmament.
Who is more happy, when, with heart's content,
         Fatigued he sinks into some pleasant lair
         Of wavy grass, and reads a debonair
And gentle tale of love and languishment?
Returning home at evening, with an ear
         Catching the notes of Philomel,—an eye
Watching the sailing cloudlet's bright career, "
কিটস তোমার বড় প্রিয় ছিল । তাই তাঁকে ই স্মরণ করে বলছি বিদায় বন্ধু, সখা , প্রিয়তম আমার । যদি হয় দেখা অন্য খানে,  অন্য কোনো জগতে ,,সেই আশায় বাঁধে মন।
ভালো থেকো ,
ইতি,
তোমার ,শুধুই তোমার ম্যাডলিন

Monday, July 9, 2018

ক্ষিদে

তিনটে ছোট্ট ঘটনা না উল্লেখ করে পারলাম না বন্ধুরা ,
১) নয়ডার একটি ভিড় ভারাক্কা ওয়ালা মার্কেট ,,,এক বৃদ্ধ শারীরিক ভাবেও খুবই দুর্বল , ,,,প্রচন্ড গরমে রোদে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছিলেন । আমায় দেখেও প্রত্যাশার হাত বাড়িয়ে দিলেন । টাকা আমি দিই না তাই ইতিউতি খুজলাম । আখের রসের দোকান ছিল একটু এগিয়ে, এক গ্লাস রস বরফ ছাড়া বানিয়ে সেই দাদুর হাতে দিলাম , ,,,উনি একচুমুকে শেষ করলেন । জিজ্ঞাসা করলাম আর চাই ,,,তৃপ্তির হাসি দিয়ে মাথা নাড়লেন আর দু হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন । মনে হল সত্যি বোধহয় রামধনু উঠেছে আকাশে।
২)দমদম ক্যান্টনমেন্ট এ 7 তারিখ ছোট্ট বাচ্ছাদের খাওয়ানোর পর ফিরছি, ,, এক বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া দাদু ,,,আমাদের পাস দিয়ে চলে যাছিলেন হঠাৎ মনে হল ,,উনি কিছু বলছেন,,,দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞেস করলাম । উনি বললেন 10 টা টাকা দেবে মা একটু চা বিস্কুট খাবো। বললাম চলুন কি খাবেন আমি খাওয়াছি । বললেন না না আমি নিজেই পারবো , পারলে শুধু ওই 10 টাকা দাও। দিলাম 20 টাকা বললাম আবার সাথে যাবার কথা ,,,কিন্তু উনি চলতে শুরু করলেন । দেখলাম গায়ের ফতুয়াটা শত ছিদ্র 😥
৩) আমার ছোট্ট পুচু সোনার (দেওরের পুচকে) জন্য কেক নিয়ে বেরছি সুগার এন্ড স্পেস থেকে সামনেই একটা রোগ পাতলা ছেলে ছেড়া চটি পরে দাঁড়িয়ে ,,,, আমায় আধো আধো স্বরে বললো "আন্টি আমায় একটা পেস্ট্রি খাওয়াবে" । বললাম আয় ,,,ভেতরে সাজানো পেস্ট্রি দেখিয়ে বললাম কোনটা খাবি । দেখালো চকোলেট পেস্ট্রি । কিনে দিলাম , বললাম বসে খা এক গাল হেসে রাস্তার পাশে পা ছড়িয়ে বসে একটু একটু করে খেতে শুরু করলো।
এমন অনেক ঘটনার আমি সাক্ষী। কিন্তু এই তিনটি ঘটনা সাম্প্রতিক কালেই হয়েছে মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কত জন খাবার নষ্ট করি আর কতজনের কাছে ওই সামান্য টুকুও কত কাঙ্খিত । কবে যে হ্যাভ এন্ড হ্যাভ নটস এর পার্থক্য দূর হবে , সবাই দুবেলা দুমুঠো খেতে পাবে জানি না । ছোট বাচ্চারাও কত বোঝে ,,,একবার একটা বাচ্চাকে খাওয়াবো বলায় সে বলে , দিদি আমার বোনকে ডাকি ও সকাল থেকে কিছু খায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ভীষন কষ্ট হয় ।  জানিনা কতজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো একবেলার জন্য হলেও ,,,,,

Friday, July 6, 2018

প্রথম পদক্ষেপ



একা জানলার ধারে বসে । শিয়ালদহ রাজধানী দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে কলকাতার অভিমুখে। সামনে দিয়ে সবুজ ঘাসের মাঠ, মেঠো পথ , কত নাম না জানা গ্রাম, ছোট শহর মুহূর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ফেলে আসা পথের বাঁকে। আমি একা চলেছি আজ । জীবনের এই চল্লিশতম সন্ধ্যায় এসে প্রকৃত পক্ষে একা চলেছি আমি। কোনদিন ভাবিনি আমার ছেলে মেয়েদের ছেড়ে এভাবে চলতে পারবো। কিন্তু কিছু এমন প্রানের টান থাকে যা মাতৃত্বের দায়বদ্ধতা কেও ছাড়িয়ে যায়। মন খুব খারাপ । এই মন কেমনিয়ার কোনো মলম নাই,  নাই কোন পথ্য ।  মনে শুধু একটাই সুর বাজে ,,,, আমি বাড়ি যাবো । আমার অশীতিপর ঠাম্মার কোলে মাথা রেখে সব ভুলে যাবো । ভুলে যাবো আমি কারো মা , কারো স্ত্রী । মনে থাকবে শুধু আমার শৈশব। এমনিভাবেই ধরে রাখতে চাই আমার জীবনদীপ কে , যতই আসুক না কালের হাতছানি,,,, আমি যেতে দেবনা । ভালোবাসা আর আদরে ভরিয়ে রাখবো , মুড়িয়ে রাখবো শ্রদ্ধায় । কেউ যাবে না , কোথাও যাবে না আমায় ছেড়ে । আমি আসছি , আমি আসছি সময়ের গাড়িতে  সওয়ার হয়ে , পড়ন্ত সূর্যের আলোকে সঙ্গী করে ।

ছোটবেলা থেকে রক্ষণশীলতার বেড়াজালে আবদ্ধ জীবন ঠেলে দিয়েছে আমায় এক ভিন্ন দেশে । শিখেছি বাঁচতে, লড়ে আদায় করে নিয়েছি স্থান। সেই অদম্য সাহস কে  কোমরে বেঁধে আমি আসছি , আসছি আমি একা,,,,,। আগত সন্ধ্যার মিষ্টি আওয়াজ আমি শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু অনুভব করতে পারছি প্রতিটি অনু পরমাণু দিয়ে। বাচ্ছাদের খেলা, বড়দের ক্লান্ত পদক্ষেপে বাড়ি ফিরে চলা, রেল লাইন এর ধারে কিছু শ্রমিকদের রান্নার ব্যস্ততা । ওই রান্নার সুবাস কাঁচের জানলা ভেদ করে আমার কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু মনের রসনা তৃপ্তি করে ।

সব কিছুর মধ্যে আমার মন চায় ওই ধোঁয়া ওঠা ইঞ্জিনের চেয়েও আরো জোরে দৌড়ে যেতে। আগল ধরে রাখি মনের , যদি আমায় ফাঁকি দিয়ে যায় । আরে বন্ধু একটু সবুর করো , আমি আসছি , আসছি ওই দিগন্ত্পারের রামধনু সিঁড়ি বেয়ে। আমি আসছি ,,,,

হাতছানি

If you missed the train I'm on
You will know that I am gone
You can hear the whistle blow a hundred miles
A hundred miles, a hundred miles,
A hundred miles, a hundred miles
You can hear the whistle blow a hundred miles"

বাড়ি যেতে মন চায় । কিন্তু মন চাইলেই কি যাওয়া যায় ,,,, একটু আমার ক্লান্ত মন টা ঠাম্মার কোলে মাথা রাখতে চায় ,,, কিন্তু পারছি কই। দায়িত্ব আর মাতৃত্বের দায়বদ্ধতা জড়িয়ে রেখেছে আমার ডানা । যদি দূরত্বটা একটু কম হতো ,,,, সব ওই যদি তে গিয়ে আটকে যায় , কিন্তু জীবন ধারা ঠিকই নিজের গতিপথ পেয়ে যায় শুধু অবুঝ মন একরাশ ক্লান্তি, হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে ঝাঁপ দেয় দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞে । ভুলে যেতে চায় পাওয়া না পাওয়ার হিসেব , দূরে থাকার যন্ত্রনা । হেসে ওঠে ওই বড় মাদারির খেলায় , আবেগের আগুনে উথলে ওঠা অনুভূতি গুলো আবার ছোট ছোট বুদবুদের রূপ নেয় । গড্ডালিকা প্রবাহে এগিয়ে চলে জীবন ।