Saturday, March 9, 2019

মনিহার

আজ অনেকদিন পর শ্রায়া ওর বাপের বাড়ি এসেছে। ওদের বাড়িটা দমদম জংশনের কাছে হলেও ভিড় , ট্রেন বাসের আওয়াজ ,,,এসবের থেকে দূরে । পুরানো পাড়া,,কেমন যেন চারিদিক স্তিমিত মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে। অথচ এককালে  ও , টুবুল, পিকাই , মান্তু আর তমু মিলে এই পাড়া মাতিয়ে রাখতো। কত খেলা কত গল্প। পিকাইদের ছাদে  চড়ুইভাতি ,,,মান্তুর  পুতুলের বিয়ে এমনি আরো কত কি। মনে পড়ে , পুতুলের বিয়েতে মান্তুর মা ছোট্ট ছোট্ট লুচি বানিয়েছিল সাথে ছিল তেতুলের জল দেওয়া টক ঝাল ঘুগনি। আহা সেই স্বাদ যেন আজও মুখে লেগে আছে। আর একবার শ্রায়াকে সাইকেল চালানো শেখাতে গিয়ে বেচারা টুবুলের পা ভেঙে ছিল।  তারপর সব যেন কোথায় হারিয়ে গেলো। মেয়েবেলায় এসে পিকাই আর টুবুল যেন একটু দূরেই ছিটকে গেল। তমুর বাবা বদলি হয়ে আসানসোল চলে গেল ,,রয়ে গেল মান্তু আর ও। এরই মধ্যে ওদের বাড়িতে থাকতে এলো অনিকেত। শ্রায়াদের বাড়িতে অনেক লোকজন । বাবা মা, কাকু কাকিমা , ঠাম্মা আর ওরা ভাইবোন মিলিয়ে চারজন। শ্রায়ার একটা ছোট ভাই আছে আর কাকুর দুটো ছেলে,,, তারাও শ্রায়ার চেয়ে বেশ ছোট। তাই বাড়িতে শ্রায়ার বয়সী আর কেউ নেই। ওদের বাড়িতে প্রায়ই গ্রাম থেকে কেউ না কেউ আসে,,হয় পড়ার জন্য নাহয় চাকরির তাগিদে। অনিকেতও এসেছিল ,,,, বড় শহরে অনেক বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে। উদাত্ত কন্ঠে কবিতা বা জীবনমুখী গান সব কিছুতেই যেন বড় সাবলীল ছিল অনিকেত। গড্ডালিকা প্রবাহে চলতে থাকা জীবনে অনি ছিল একটা খোলা জানালা। শ্রায়ার রোজনামচায় ধীরে ধীরে মিশতে লাগলো পিট সিগারের গান, জয় গোস্বামী আর চ্যে গুয়েভারা । কি মাদকতা ছিল সেই দিনগুলোতে । চিন্তার স্রোত ছিন্ন করে সে এসে দাঁড়ায় নিচের তলার সেই ঘরটার সামনে। দরজায় লাগানো তালাটায় জং পড়েছে। দু তিনবার চাবি সমেত ঝাঁকুনি দিতেই খুলে গেল। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে শ্রায়া,,,,, চারিদিকে জমেছে ঝুল ,,পড়েছে ধূলো। অভ্যস্ত নাক ঠিক খুঁজে নেয় তার ফেলে আসা কিশোরী বয়সের গন্ধকে নাকি অনিকেতের গন্ধকে ,,,বুঝতে পারে না সে। স্টাডি টেবিলে আজো পড়ে আছে  জয় গোস্বামীর "যারা বৃষ্টিতে ভিজে ছিল" ,,,,, সযত্নে আঁচল দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করে দেয় । তারপর নিয়ে আসে নাকের কাছে ,,,, প্রাণ ভোরে শ্বাস নেয় সে,,,, খুঁজে পেতে চায় তিরিশ বছর আগে ফেলে আসা সেই দিনটার গন্ধ , ঠোঁট দিয়ে অনুভব করতে চায় তার অনিকেত কে।
সে তো নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে সঁপে দিতে চেয়েছিল অনির হাতে। কিন্তু ,,, না অনি সুযোগের ব্যবহার করেনি ,,, শুধু দু চোখ ভরে দেখেছিল তাকে ,,, সেই দৃষ্টিতে কামনা ছিল না ,,,ছিল গভীর সমুদ্রের  চেয়েও গভীর ভালোবাসা। অনিকেত কোনো কিছু ছিনিয়ে নিতে জানতো না ,,,, ওর চোখ দুটো দেখলেই মনে হতো কেউ যদি বলে তোমার প্রাণ টা দাও সেটাও বোধহয় নির্দ্বিধায় দিয়ে দেবে। এমনি ছিল অনিকেত,,, শ্রায়ার অনি।
শ্রায়া গাইতো ,,," আমার সকল রসের ধারা ,,তোমাতে   আজ হোক না হারা " আর অনি গাইতো ,," last christmas I gave you my heart"... Wham ,,, সে এক অদ্ভূত যুগলবন্দী ।
কখন যেন শ্রায়া গুন গুনাতে লেগেছিল গান টা ,,,, মিহিরের আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে তার। মিহির তার ছোট ভাই ,,,, মিহির বলে ,,"দিদি তুই আজো অনিকেত দাকে ভুলিসনি তাই না? " একটু চুপ করে থাকে শ্রায়া ,,,, ভাইয়ের কথার উত্তর না দিয়েই বইটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। আগামী সপ্তাহে বাড়িটা ভাঙা হবে। তাই ওরা সব ভাই বোন এসেছে শেষবারের মতো তাদের ফেলে আসা ছোটবেলাকে ফিরে পেতে।
বাকি সবাই তাদের ছোটবেলার কিছু জিনিস তুলে নিচ্ছে ,,, গল্প শোনাচ্ছে তাদের ছেলে মেয়েদের। শ্রায়া শুধু একা ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়িটার প্রতিটা খাঁজে,,,কি জানি যদি আরো কিছু স্মৃতির মনি মুক্ত খুঁজে পাওয়া যায় ,,,তাহলে সে সযত্নে তুলে নেবে ,,, গাঁথবে তাই দিয়ে মনিহার। সব কাজের শেষে , সারাদিনের দায়িত্বের বোঝা নামিয়ে যখন শ্রায়া একা হবে তার বহুতলের ফ্ল্যাটে , তখন সে তুলে নেবে এই মনিহার ,,,,একটা একটা করে দেখবে মুক্তো গুলোকে ।

অনিন্দিতা নস্কর

স্বপ্নের বিলাসিতা


স্বপ্নের বিলাসিতা

কাঁধটা যাচ্ছে ঝুঁকে অবসাদে
মুহূর্তের শব্দ বাণে ছিন্ন মায়ালোকে
নিজের বানানো স্বপ্নপুরী
প্রতিটা পাথরে সুখ দুঃখের কাটাকুটি
অশ্রু রক্ত মিলে মিশে পূতি গন্ধময়।
ব্যর্থ জীবনের গ্লানি বয়ে আর কত দিন
ঘুরে ঘুরে বেড়াবো অবসন্ন মনে
হৃদয় হতে পড়ছে রক্ত অবিরত
বৃষ্টির জল আর কান্না ,,, টুপটুপ ,,টুপ
রাতের অন্ধকারে সব একাকার,,,
হাত বাড়িয়ে একমুঠো শ্বাস ,, ধরতে পারা
রূদ্ধ শ্বাস কিছু প্রতীক্ষা,
তারপর হবে যদি শেষ ,,,, আমার
শবদেহে বানিও কোনো ব্যর্থ প্রেমের তাজমহল ।।
কাঁধটা যাচ্ছে ঝুঁকে অবসাদে
মুহূর্তের শব্দ বাণে ছিন্ন মায়ালোকে
নিজের বানানো স্বপ্নপুরী
প্রতিটা পাথরে সুখ দুঃখের কাটাকুটি
অশ্রু রক্ত মিলে মিশে পূতি গন্ধময়।
ব্যর্থ জীবনের গ্লানি বয়ে আর কত দিন
ঘুরে ঘুরে বেড়াবো অবসন্ন মনে
হৃদয় হতে পড়ছে রক্ত অবিরত
বৃষ্টির জল আর কান্না ,,, টুপটুপ ,,টুপ
রাতের অন্ধকারে সব একাকার,,,
হাত বাড়িয়ে একমুঠো শ্বাস ,, ধরতে পারা
রূদ্ধ শ্বাস কিছু প্রতীক্ষা,
তারপর হবে যদি শেষ ,,,, আমার
শবদেহে বানিও কোনো ব্যর্থ প্রেমের তাজমহল ।।

অনিন্দিতা নস্কর