Monday, July 1, 2019

ইচ্ছা

" I don't know if we each have a destiny, or if we're all just floatin' around accidental-like on a breeze, but I, I think maybe it's both. Maybe both is happenin' at the same time. I miss you Jenny. If there's anything you need. I won't be far away."
বসার ঘরে লাগানো 56 ইঞ্চির LED টিভিতে ফরেস্ট গামপ দেখতে দেখতে বন্যা আড় চোখে পাশের আয়নাটার দিকে তাকালো,,, সেখানে স্বপ্নীলের প্রতিফলন পড়েছে । সিনেমা দেখায় কোনো উৎসাহ নেই তার,,,, স্টাডিরুমটাই নীলের জগৎ । আয়না দিয়ে দেখতে দেখতে বন্যা বুঝতে পারলো ,,,, এই মানুষটা বড় দূরের । তারা যেন দুটো বিপরীত মেরু ,,, নীল যেখানে শান্ত ধীর ,,নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরোতে পারেনা। তার সবকিছুই যেন হিসেব করে রাখা । সেখানে বন্যা , তার নামের মতোই অবাধ , অবাধ্য ,,,প্রচন্ড স্রোতে ভেসে চলাতেই তার জীবনের সার্থকতা। বন্যার আশে পাশে যেন এক এনার্জির বলয় আছে ,,,, অনর্থক চাওয়া পাওয়ার বেড়াজালে বাঁধতে চায় না তার মন।  বোহেমিয়ান জীবন তাকে নিরন্তর হাতছানি দিয়ে ডাকে। বন্যার মনে হয় সে যেন কোনো এক মায়াজালে ক্রমশ বন্দী হয়ে যাচ্ছে। তার মুহূর্তে মনে পড়ে যায় চারুলতা সিনেমার একটা দৃশ্য ,,,যেখানে চারু জানলার খড়খড়ি দিয়ে দূরবীন লাগিয়ে প্রস্থানরত তার স্বামীকে লক্ষ্য করছে । হ্যা ,, ঠিক একই ভাবে বন্যা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে নীলকে আপন করে নেবার ,,,,,, হঠাৎ ই মোবাইলে আসা ইমেল নোটিফিকেশনের আওয়াজে তার চিন্তার স্রোত থেমে যায় ,,,,, তাড়াতাড়ি মোবাইলে চেক করে মেল টা ,,,,, কপালে ভাঁজ পড়লেও ঠোঁটের কোণে ধরে হাসির রেখা ।

স্টাডি রুমের দরজায় যখন বন্যা এসে দাঁড়ালো , স্বপ্নীলের মনে হলো এ সে কাকে দেখছে?  তারই সাদা রঙের বুশ শার্ট টা পরেছে বন্যা , দু একটা বাটন ইচ্ছাকৃতভাবেই খোলা রয়েছে। নিচের গোলাপি অন্তর্বাস  হালকা  করে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। নীল যেন নতুন করে আবিষ্কার করলো তার ছয় মাস আগে বিয়ে করা বৌ'কে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে গেল সে বন্যার দিকে। কিন্তু বন্যা আজ ছলনাময়ী। স্বপ্নীল তাকে ধরতে পারার আগেই সে দৌড়ে নিজেদের বেডরুমে চলে গেল। স্বপ্নীলও যেন কোন এক আদিম রহস্যের টানে তার পিছনে এগিয়ে গেল । আজ বেডরুম টাও অচেনা লাগছে,,,, চারিদিকে ছোট ছোট জলপাত্র ,, তাতে গোলাপের পাপড়ি আর মোমবাতি ভাসছে । এলেক্সা পিঙ্ক ফ্লয়েড বাজাচ্ছে খুব হালকা আওয়াজে । মৃদু রাত আলোয় বন্যাকে মনে হচ্ছে কোনো এক মায়াবিনী ,,,, যে তৃষ্ণানার্ত হয়ে আছে প্রেম সুধার জন্য। নাহ আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না ,,, স্বপ্নীল সেই আদিম রিপুর দ্বারা তড়িতাহত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো বন্যার উপর। তার কোমল ঠোঁট দুটো কে নিজের ঠোঁট দিয়ে নিষ্পেষিত করতে লাগলো। বন্যার মুখে ঠোঁটে একটা মৃদু গাঁজার গন্ধ ,,,, স্বপ্নীল যেন মহুয়া খেয়ে মত্ত হাতির মত হয়ে উঠলো। একটানে বিবসনা করে দিল বন্যাকে। রাত আলো যেন বন্যার শরীরকে ছুঁয়ে পিছলে নেমে যাচ্ছে। দুটো শরীর পৃথিবীর আদিমতম খেলায় মেতে উঠলো। আদরে আদরে ভরিয়ে দিল বন্যাকে ,,,,,, ফিসফিস করে তার কানে বললো ,,,এ রাতের যেন শেষ না হয় । খেলায় মেতে ওঠে বন্যাও। হঠাৎ ই তার মনে পড়ে যায় বছর খানেক আগের এমন একটা দিন ,,,, সাগ্নিক তার উদ্দাম ভালোবাসায় সিক্ত করে দিচ্ছিল তাকে। কিন্তু অনভিজ্ঞ বন্যা সে ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে পারেনি। সাগ্নিকের হাত আর  ঠোঁট যখন তার শরীরের প্রতিটা কোণকে খুঁজে পেতে চাইছিল ,,, বিহ্বল বন্যা দূরে সরিয়ে দিয়েছিল তার প্রেমিককে। অপমানিত ,প্রতারিত বোধ করেছিল সাগ্নিক ,,,,, দূরে অনেক দূরে সরে গেছিল তারা। আজকের এই শরীরী খেলায় কেন মনে পড়ছে সাগ্নিক কে ,,,, চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। স্বপ্নীল ভাবে কামাতুর বন্যার প্রেমাশ্রু । বন্যা আরো বেশি করে খেলায় মেতে ওঠে ,,,ভুলিয়ে দিতে চায় তার অতীত ।
খেলা শেষে ঘুমিয়ে পড়ে নীল ,,,,, হালকা আলোয় স্বামীর মুখটা দেখে বন্যা। চুল গুলোকে সরিয়ে দেয় মুখের উপর থেকে ,,, একটা আলতো চুমু খেয়ে নিজেকে আলিঙ্গন মুক্ত করে উঠে দাঁড়ায়। একটা নাইট গাউন জড়িয়ে নেয় তার নগ্ন দেহে র উপর। তারপর ড্রয়ার থেকে একটা সিগারেট বার করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়।শহরের এদিকটায় শুধুই হাইরাইজের ভিড় । বন্যাদের ফ্ল্যাট টা একুশ তলায় ,,,, এত উঁচুতে উঠে নিচের মানুষগুলোকে যেন পিঁপড়ের মতো লাগে। উদ্যাম হাওয়া বন্যার চুল গুলোকে এলোমেলো করে দেয়। সিগারেটের ধোঁয়ায় মনের নানা চিন্তা গুলোকে ভাসিয়ে দিতে থাকে। মনে মনে ভাবতে থাকে কাল কিভাবে নীল কে জানাবে তার চাকরির খবর টা ,,,, সে যে ওড়ার টিকিট পেয়ে গেছে । এই সংসার তার জন্য নয় ,,, তার ভিতরের যাযাবর সত্ত্বা তাকে টিকতে দেবে না ঘরে। তার মন চায় পৃথিবীটাকে জানতে দেখতে,,, মানুষের জন্য কিছু করতে। এই চাকরিটা তার অনেকটাই স্বপ্ন পূরণ করবে। নাহ ,,, এই সুযোগ ছেড়ে দিলে চলবে না । মন শক্ত করে তাকে বলতেই হবে ,,,, সিগারেট এ শেষ টান টা দিয়ে ঘরে এসে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা নীল এর পাশে সেও শুয়ে পড়ে। কালকের ভোরের অপেক্ষা শুধু ,,,,

Thursday, May 9, 2019

রবীন্দ্রনাথ ও একটা দিন



আজ তোমার জন্মদিনে তোমাকে কিছু দেবার ধৃষ্টতা করিনা।
তবু তোমারই রচনাকে আশ্রয় করে ছোট্ট একটা কোলাজ বানিয়েছি রবি ঠাকুর ,,,,, আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী


"রজনী প্রভাত হল--
       পাখি , ওঠো জাগি,
আলোকের পথে চলো
        অমৃতের লাগি।"
সূর্যের প্রথম কিরণ যখন চোখে এসে পরে, জেগে ওঠে প্রাণ , জেগে ওঠে জীবন। আলস্য ভরা- সকাল ঘুমের রেশ চোখে  নিয়ে মন ভাবে --
"আমি যে বেশ সুখে আছি,
 অন্তত নই দুঃখে কৃশ---"

মূহুর্তের এই দার্শনিক ভাবনা হারিয়ে যেতে থাকে জীবনের কলরবে। কাজ, দিনচর্চা, আলস্য আর সময়ের আলিঙ্গনে কিছু বোঝাপড়া ,,, নিজের সাথে , পারিপার্শ্বিকের সাথে ;
"মনেরে আজ কহ যে ,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।"

 এই চির সত্যকে জানি , মানি ,,, কিন্তু জীবনে মেনে নিতে পারি ক'জন। ওই যে কবি বলে গেছেন, " সবচেয়ে দুর্গম সে মানুষ, আপন অন্তরালে।"
দিন গড়ায় , সুয্যি মামা  নিজের প্রচন্ড রূপ ধারণ করে শাসন করে চলেছেন -  কি অসহায় জীবন, যার তরে আমাদের এত আয়োজন ,
" রৌদ্র তখন মাথার' পরে,
    পায়ের তলায় মাটি,
  জলের তরে কেঁদে মরে
      তৃষায় ফাটাফাটি ।"

তবু আমরা স্বপ্ন দেখি , বাঁচার রসদ খুঁজি । ভাত ঘুমের সাথে, পানের রসাস্বাদন , কাকের একঘেয়ে চিৎকার আর অম্বুরী তামাকের গন্ধ বিজড়িত হয়ে কবিতার ঝাঁকি নিয়ে বসি ,, আমি -তুমি ও সে ,,,, খুঁজে চলি ছন্দ আর মনের শব্দ গুচ্ছ হাতড়ে বেড়াই ,,,,,
" বেলা যখন পড়ে এল,
          রৌদ্র হল রাঙা ,
নিশ্বাসিয়া উঠল হু হু
      ধূ ধূ বালুর ডাঙা ।"

পাখির কলরবে মুখরিত হয় চারিদিক, ঘরে ফিরিবার দিয়েছে প্রকৃতি ডাক। সন্ধ্যা মালতীর কলি ফুটেছে ওই অলি গলি ,,, আর আমি সন্ধ্যার লাজে রাঙা আকাশ দেখিয়ে বলি ,,
" হে পাখি, চলেছ ছাড়ি
       তব  এ পারের বাসা,
ও পারে দিয়েছ পাড়ি ---
       কোন সে নীড়ের আশা?"

মনের সমস্ত উৎসাহ নিমেষে আদ্র হয়ে ওঠে যখন মন বলে ,,, দিনের হলো শেষ --
"সূর্য গেল অস্তপারে----
 লাগলো গ্রামের ঘাটে
আমার জীর্ণ তরী।"

অমিত লাবণ্যের হাত ধরে ঘুরেছি প্রেমের কানাগলি ,
"মন-দেয়া-নেয়া অনেক করেছি
 মরেছি হাজার মরণে ;
নূপুরের মতো বেজেছি চরণে চরণে।"

কিন্তু নানা দুঃখের চিত্ত বিক্ষেপে আমার মন যে যায় কেঁপে ,,, তবু সঙ্গীর হাত ছাড়তে নারাজ আমার প্রেমিক মন ,,,"হাতে হাত ধরো , প্রতিজ্ঞা করো"--- আকাশের সব তারাকে সাক্ষী করে প্রেমের প্রদীপ জ্বালো ,,,
" আমরা যাবো যেখানে কোন
       যায়নি নেয়ে সাহস করি
ডুবি যদি তো ডুবিনা কেন
        ডুবুক সবি , ডুবুক তরী।"

হ্যাঁ , বেঁধেছি আমি আমার প্রেমের ছোট্ট নীড়, বেসেছি ভালো আমার ভালোবাসা ও ভালোবাসার সন্তান,,, পূর্ণ হয়েছে আমার কবিতার ছন্দ ---
"অনন্ত এ আকাশের কোলে
         টলমল মেঘের মাঝার
এইখানে বাঁধিয়াছি ঘর
         তোর তরে কবিতা আমার ।"

দিন শেষ হয়, রাত্রি আসে, বিদায় বেলায় করুণ রসে,,, ঝিকিমিকি তারায় ঝলমলিয়ে ওঠে আকাশ । সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভর করে শরীরে ,,, মনে।
" অনেক তিয়াষে করেছি ভ্রমণ,
    জীবন কেবলই খোঁজা।
অনেক বচন করেছি রচন,
    জমেছে অনেক বোঝা।
যা পাইনি তারি লইয়া সাধনা
        যাব কি সাগর পার ?
যা গাইনি তারি বহিয়া বেদনা
        ছিঁড়িবে বীণার তার? "

অনিন্দিতা নস্কর

ছবি সূত্র অন্তর্জাল

Tuesday, April 9, 2019

ফ্ল্যাট নাম্বার ৬৭৭


নতুন ফ্ল্যাটে সদ্য শিফ্ট করেছে শ্রীজাত । এখনো সেরম ভাবে গুছিয়ে ওঠা হয়নি। প্রথম দু দিন ওর বন্ধু মলয় সাথে ছিল । তাই ঘর সাজানোর থেকে আড্ডা হয়েছে বেশি। এরই মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে রেখেছে। আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে শ্রীজাত। আগামী মাসে মা বাবা কে নিয়ে আসবে ভেবেছে। মোবাইলে এফ এম এ গান চালিয়ে কষিয়ে মুরগি রান্না করে , সঙ্গে দেরদুন রাইস । আহা রাতের খাওয়াটা জাস্ট জমে যাবে । গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে রান্না টা শেষ করে ফ্রেস হতে যায়। শাওয়ার টা অন করে দেয় ,,,, সবে ঠান্ডা জলের ধারায় নিজেকে তরতাজা করছিল শ্রী,,, হঠাৎ ই বাইরে বাসন পড়ে যাবার আওয়াজে চমকে ওঠে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে দেখে ,,, বেশ কিছু বাসন নীচে পড়ে আছে । মাংসের বাটি থেকেও কিছুটা চলকে গেছে। কিন্তু শ্রীর খুব ভালো করে মনে আছে , সে স্নানে যাবার আগে সব গুছিয়ে রেখে গেছিল । চারিদিকে ভালো করে দেখতে গিয়ে দেখে ব্যালকনির দরজাটা খোলা। হেসে ফেলে শ্রী ,,, নিশ্চই কোনো বেড়াল ঢুকেছিল ,,আর সে কিনা কি ভাবতে লেগেছিল । রাতের খাবার পাট চুকিয়ে ল্যাপটপে একটা এভেঞ্জার মুভি চালিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখতে থাকে ,,, কখন যে নিদ্রাদেবী  তাকে ঘুমের দেশে নিয়ে যায় ,,,,। রাত কটা শ্রীর মনে নেই ,,, ঘড়িও দেখা হয়নি ,,,, প্রচন্ড তেষ্টায় ঘুম ভেঙে যায় । জলের বোতল টা নিয়ে দেখে তাতে জল নেই ,,,, কিন্তু সে তো জল ভরে এনেছিল ,,,তবে কি । আবার শ্রী ঘুম জড়ানো চোখে কিচেনে যায় জল ভরতে । হঠাৎ শুনতে পায় বাথরুমে যেন জল পড়ার আওয়াজ । ঘুম এর শেষ রেশ টুকুও কেটে যায়। বাথরুমে এসে দেখে ,,, কই কোনো কল খোলা নেই তো । ঘাড়ে মাথায় জল দিয়ে আবার ও গিয়ে শুয়ে পরে শ্রী।  ঘুম ঘোরে যখন স্বপ্নের জাল বোনে তখন শ্রী একটা মিষ্টি গন্ধে চোখ খুলে দেখে তার মুখের উপর ঝুঁকে পরে আছে এক মোহিনী নারী মূর্তি। তার বিভঙ্গ ,তার রূপ,  তার আকর্ষণ এড়ানোর সাধ্যি কারো নেই বলে মনে হয় শ্রীর । সেই মোহিনীর ঠোঁট দুটো নেমে আসে তার পিপাসার্ত ঠোঁটের উপর । প্রথম ভালো লাগার উষ্ণতায় শিহরন জাগে তার সমস্ত পুরুষ শরীরে । কিন্তু ক্ষণিক পরেই শ্রীজাত বুঝতে পারে ,,, তার সমস্ত কিছুই শুষে নিচ্ছে মোহিনী ,,, ছটফট করে , ছাড়িয়ে নিতে চায় ,,,কিন্তু সে পেরে ওঠেনা ,,,সেই  মোহিনীর বাহু বন্ধনে যেন শত হস্তিনীর বল ছিল ,,,, তারপর আর কিছু মনে নেই শ্ৰীর।
দুদিন পর মলয় আর অফিসের সুমন এসে আবিষ্কার করে শ্রীর শুকনো শরীর টা ,,, যেন কেউ সমস্ত রক্ত মাংস শুষে নিয়েছে ,,,,,
কি হয়েছিল তা কেউ জানতেও পারলো না ।
কিছু দিন পর ,,,, "ম্যাম ফ্ল্যাট নম্বর ৬৭৭ কোন ফ্লোরে একটু বলবেন" ,,মৃনাল জিজ্ঞাসা করে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মোহিনীকে । মোহিনী তার ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলে ,,, "সেভেন্থ ফ্লোর ,,  আসুন না ,,আমিও ওই ফ্লোরেই থাকি ,,,,"

(ছবি সংগৃহীত )
অনিন্দিতা নস্কর

চৈত্র দুপুর আর রক্ত পলাশ

                                  (১)

সকালের প্রথম আলোর সাথে ঘুম ভাঙে শ্রী এর । আলস্য এসে আরো বেশি করে জড়িয়ে ধরে তাকে । বিছানার চাদর , বালিশ সবাই যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে শ্রী কে। তবু শ্রী সব আহ্বান উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসে বারান্দায় । মিষ্টি একফালি আলো এসে পড়েছে সামনের দেওয়ালে ,,, চড়ুই আর কাঠবিড়ালি নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত। কোথা থেকে আবার একটা ফিঙে এসে জুটলো। সুন্দর কালো লেজ ঝুলিয়ে নিজের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালায় ,,,, পায়রাগুলো একটুও পাত্তা দেয়না । কেউ কাল রাত্রে বেঁচে যাওয়া ভাত ছড়িয়ে দিয়েছে বাগানে ,,, ওরা সেই খেতেই ব্যস্ত। সকালের এই ছবি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ,,,তবুও শ্ৰীয়ের খুব ভালো লাগে। পিচারে করে জল দেয় তার সাধের গাছ গুলোতে। বেল ফুলের গাছটায় কুঁড়ি এসেছিল, কাল সন্ধ্যায় প্রথমবার ফুল ফুটলো। গন্ধে চারিদিক ভেসে যাচ্ছে। একটা মিষ্টি নেশায় ফুল গুলোকে আলগোছে কাছে টেনে নেয় ,,,, বুক ভরে শ্বাস নেয় । স্বর্গীয় সুবাসকে যেন নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখতে চায় সে ,,,সারাদিনের কাজের ফাঁকে ও তাকে ঊর্যা দেবে বেঁচে থাকার। হঠাৎ ই মনের কোনো এক গুপ্ত সিন্ধুকের দরজা খুলে যায় । মুহূর্তে ফেলে আসা কোনো এক চৈত্রের সকাল সামনে এসে দাঁড়ায় শ্ৰীয়ের। থরথর করে কেঁপে ওঠে সে,,,, বসন্তের শেষ বেলায় রক্ত রাঙা পলাশ ।

                                      (২)

"চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে--
জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে বক্ষে ধরিব জড়ায়ে ॥
স্খলিত শিথিল কামনার ভার বহিয়া বহিয়া ফিরি কত আর--
নিজ হাতে তুমি গেঁথে নিয়ো হার, ফেলো না আমারে ছড়ায়ে ॥",,,গানটা গাইতে গাইতে গলা বুজে আসলো শ্ৰীয়ের ।

বাড়ির বড় বারান্দা ,,, অনেকটা লম্বা । শ্রী অলস ভাবে হেঁটে চলে । পিঠ ছাপানো চুল , আটপৌড়ে শাড়ি ,,,, শ্রীয়ের মধ্যে এখনো একটা আকর্ষণ আছে । এখনো গেট্যু তে অবিনাশের বন্ধুরা ঘুরে তাকায় । শ্রীয়ের বেশ ভালোই  লাগে এই এক্সট্রা আটেনশন টুকু। তার নিস্তরঙ্গ জীবনে হালকা করে কল্পনার জাল বুনে যায় । বাড়ির কাজ , বাইরের কাজ সবই একা হাতে সামলায় সে । অবিনাশকে বিশেষ চিন্তা করতে হয় না। অবির খুব ভরসা শ্রীর উপর ,, সে সবার সামনে স্ত্রীর প্রশংসা করতে পিছপা হয় না ,,,, এর পিছনে শ্রীর প্রচ্ছন্ন ভালো লাগা লুকিয়ে আছে।
তবু নিজের একা সময়ে শ্রী বড়ই একা ,,,, সে যেন খাঁচায় বদ্ধ পাখি যার আকাশে ওড়ার স্বাধীনতা নেই। সে যে ডানা মেলে উড়তে পারে আকাশে এটা কেউ ভাবতেই পারে না । কাছের মানুষদের তির্যক মন্তব্য তাকে বিদ্ধ করে ,, মনের কাঁটা ছেঁড়া গুলো আবার ফুটে ওঠে ,, মনে পড়লেই গলার কাছটা তেতো লাগে ।
বৃষ্টি পড়ছে ,,,, ইলশে গুড়ি বৃষ্টি ,,, হাওয়ার দমকে শ্রীয়ের চোখে মুখে জলের ঝাপটা লাগছে । সামনের চুল গুলো ভিজে গিয়ে কপালে গালে লেপ্টে আছে । বিদ্যাপতির দু লাইন গেয়ে উঠলো শ্রী ,,,
""এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর। এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর |"',,,,,,, মনের আসনে যার অধিষ্ঠান তাঁর নিত্য পূজা হয় রক্ত রাঙা পলাশ দিয়ে । সেই লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ে আকাশের গায়ে। সুয্যি পাটে যেতে বসেছে ,,, এই মেদূর লাল রঙ মন খারাপ করে দিয়ে যায়।

                                       ( ৩)

চোখে মুখে বৃষ্টির জল লেগে আছে। কিন্তু মুছতে ইচ্ছা করলো না শ্ৰীয়ের। থাক না আর কিছুক্ষন ওই মুক্তোর মতো জল বিন্দু ,,,যাতে মিশে আছে দেবতার কান্না আর স্বাতী নক্ষত্রের জল ।  রান্নাঘরে গিয়ে শ্রী কড়া করে কফি বানালো, তারপর বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে বসে প্রকৃতির রূপ কে নিজের মধ্যে অনুভব করতে লাগলো। এই সময়টা একান্তই তার ,,,, সংসারের হাজারো কাজের শেষে শ্রী নিজেকে দেখতে পায় ,, আয়নায় দাঁড়িয়ে চেনার চেষ্টা করে কুড়ি বছর আগে ফেলে আসা শ্রীকে । নাহ কাউকেই চিনে উঠতে পারেনা ,,,, নিজেকেও না । কি চেয়েছিলাম আর কি পেলাম আর কি ফিরিয়ে দিতে পারলাম ,,, এই ত্রিশঙ্কুর মাঝে ঝুলে আছে শ্রী ,,, যত সে জাল কেটে বেরোতে চায় তত ই জাল তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে  বেঁধে দেয় ।
সময় শেষ হয়ে আসছে শ্রীর ,,, কফির কাপটা রেখে ধীরে ধীরে নিজের কাবার্ড খোলে সে । পুরানো শাড়ির মাঝখানে রাখা একটা প্যাকেট বার করে শ্রী ,, সন্তর্পণে খোলে ,,, পরম মমতায় একটা মখমলের কাপড়ে জড়ানো জিনিসটা বের করে আয়নার সামনে দাঁড়ায় । কাপড়ের ভিতর থেকে একজোড়া ঘুঙুর বেরিয়ে আসে ,,,, পরম যত্নে সে ঘুঙুরগুলোর আঘ্রান নেয় ,,তাদের ঠান্ডা স্পর্শ শ্রী প্রাণপণে নিজের সারা শরীরে যেন মেখে নিতে চায় ,,,, রিনিঝিনি আওয়াজের মধ্যে দিয়ে সে পেয়ে যায় তার জীবনীশক্তি আগামী দিনের জন্য ,,, আরো ,,আরো আরো ,,,,সময় শেষ হবার আগে আবার বেঁচে ওঠা ।।
"You have the right to love
and be loved as well.
The right to, not just break but, shatter from your shell.
Run free, run proud
sing to me and sing it loud."

(Anthony Jarell Alexander Sep 2011)

                                   (৪)

চৈত্র শেষের অন্নপূর্ণা পূজার অষ্টমী পূজায় ঘিয়ের ১০৮টা প্রদীপ জ্বালিয়ে ছিল সে । সন্ধ্যা আরতির সময় মায়ের মুখের অদ্ভূত তেজে কি দেখেছিল শ্রী আজো জানে না। ঢাকের বাদ্যি , কাসর ঘন্টার আওয়াজ ,, শঙ্খ সব মিলিয়ে সে এক পরিবেশ আর শ্রী নেচেছিল তার শেষ নাচ । ঠাকুরকে সমর্পণ করে সে নাচে কি ছিল জানে না ,,,,, ওই সময়টুকুর জন্য যেন সময়চক্র থমকে গিয়েছিল । হাঁফাতে হাঁফাতে ছাদে চলে গিয়েছিল সে। ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছিল । কোনো এক নেশায় , আবেগে বিভোর হয়ে শ্রী কাঁপছিলো। হঠাৎ তার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পায় । ফিরে তাকিয়ে দেখে নীলাদ্রি দাঁড়িয়ে ,,,, নীলাদ্রি তার বাল্যের সখা , যৌবনের চলার সাথী । সেই নীলাদ্রির স্বপ্নমেদুর চোখে শ্রী দেখেছিল ভালোবাসার ঘরের স্বপ্ন। আজ এই সন্ধ্যায় বৃষ্টির জলে দুটি হৃদয় আরো যেন কাছে চলে এলো। দুটি প্রাণ প্রথমবারের জন্য আলিঙ্গন বদ্ধ হলো ,,,, উত্তাপের নির্যাস ছড়িয়ে পড়লো তাদের দেহে মনে,,, কতক্ষন এমন ভাবে ছিল তারা ,,, শ্রী মনে করতে পারে না ,,,, তার ঠোঁট দুটোয় ছিল এক জ্বালা ,, যেন সহস্র বৃশ্চিকের দংশনে জ্বলছে। তারপর কখন যে তাদের স্যালাইভা আর বৃষ্টির জল মিলে মিশে তাদেরকেই ভিজিয়ে দিলো ,,,,,
" অনেক লবণ ঘেঁটে সমুদ্রের পাওয়া গেছে - যে মাটির ঘ্রাণ,
ভালোবাসা আর ভালোবাসার সন্তান,
আর সেই নীড়,
এই স্বাদ -গভীর-গভীর !"

তীব্র স্বরে কলিং বেলের আওয়াজে চমকে ওঠে শ্রী ,,, চিৎকার করে সাড়া দেয় ,,,"আসছি" ,,,, ফিরে তাকায় ,,,কৈ কেউ নেই তো তার চারপাশে ,,, কোথায় নীলাদ্রি কোথায় ছাদ ,,কোথায় পুজো সেতো একা দাঁড়িয়ে আছে ,,,,আয়নার সামনে ঘুঙুর হাতে ।
আবার কর্কশ স্বরে কলিংবেল টা বেজে উঠলো ,,,জানান দিলো নিজের অস্ত্বিত্ব এর ।
(কবিতা জীবনানন্দ দাশের)

                                    (৫)

শ্রী দ্রুত পায়ে নীচে নেমে আসে । তাড়াহুড়ো তে ঘুঙুর টা রাখতেও ভুলে যায় । দরজা খুলতেই দেখে অবিনাশ দাঁড়িয়ে আছে সামনে। অসময়ে অবি কে দেখে বিস্মিত হয়। শ্রীকে কিছু বলতে না দিয়েই , অবি বলে ," কি কেমন সারপ্রাইজ টা দিলাম বলো তো?" দরজা বন্ধ করতে করতে শ্রী হেসে বলে , "হ্যা তা দিলে বই কি" । ততক্ষনে সে নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছে । শ্রীকে দরজা বন্ধ করতে দেখে হৈ হৈ করে ওঠে অবি। বলে , " আরে বড় সারপ্রাইজ টা না দেখেই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছ যে"।বলেই কারোর উদ্দেশ্য বলে ওঠে , "আরে মশাই কোথায় গেলেন ? আসুন ,,,আসুন " । শ্রী অবাক হয়ে দরজার বাইরে দেখতে যায় ,,, তাকে হতভম্ব করে দিয়ে ,সামনে এসে দাঁড়ায় নীলাদ্রি ।
এই ক্ষনের জন্য কতবার কল্পনা করেছে সে, মনে মনে মহড়া দিয়েছে ,,কিভাবে সামনে দাঁড়াবে নীলের ,,, আর আজ সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এসে গেছে ,, কিন্তু একি ,,,,যে নীল কে আজ ও সে ভুলতে পারেনি ,,,কতবার ভেবেছে ছুটে চলে যাবে ,,, ঝাঁপিয়ে পড়বে তার স্বপ্ন পুরুষের বুকে ,,,সঁপে দেবে নিজেকে তার বলিষ্ঠ বাহু বন্ধনে ------- আজ সেই নীলাদ্রি কে দেখেও তার মনে সেরম কোনো অনুভূতি হলো না তো ।

কোনোমতে হেসে শ্রী বললো ,,, "আরে নীল , তুমি এখানে" ?  নীলাদ্রি কিছু বলার আগেই অবি বলে , "আরে তোমার বন্ধু তো চুপিচুপি চলে যাচ্ছিল , আমাদের সাথে দেখা না করেই । দেখতে পেয়ে জোর করে ধরে নিয়ে আসলাম । তোমরা কথা বলো , আমি ঝট করে ফ্রেশ হয়ে আসছি "  বলে অবি চলে যায়। অনেকক্ষণ ধরে মনের মধ্যে যে ঝড় বইছিল ,,, তা যেন খোলা আকাশ পায় । একে অপরের দিকে নির্নিমেশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ,,,, শেষে নীলাদ্রি অস্ফুট স্বরে বলে , "কেমন আছো শ্রী"?  কিছু জবাব দেবার আগেই অবি ঘরে ঢোকে ,,, বলে,   "নীলাদ্রি বাবু কেমন লাগছে বলুন আপনার বন্ধুকে দেখে "?  পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শ্রী বলে , "আমি কিছু বানিয়ে আনছি , তোমরা ততক্ষণ গল্প করো" । সে রান্নাঘরে চলে আসে । যত্ন করে মুড়ি মাখে আমের আচার এর তেল মশলা দিয়ে ,,, নীলের খুব পছন্দের। আর বানায় লেবু চা । প্লেটে সাজিয়ে বসার ঘরে এসে দেখে অবি একাই বসে। তাকে দেখে অবি বলে, আরে তোমার বন্ধু কিছুতেই বসলো না , বললো  ওর  ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে । যাওয়ার আগে এই বইটা দিয়ে গেছে । "  কাঁপা হাতে বইটা নেয় শ্রী ,,  দেখে জয় গোস্বামীর "যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল" । লুকিয়ে বইয়ের ঘ্রাণ নেয় , নাকি অন্য কোনো গন্ধ খুঁজে নিতে চায় । নিজেকে সংযত করতে  বললো , যাই দরজাটা দিয়ে আসি ,,,,, দরজা দিতে গিয়ে দেখলো গলি দিয়ে নীল ধীর পায়ে চলে যাচ্ছে ,,,, পাশেই পলাশ গাছটার থেকে টুপটুপ করে ফুল ঝরে পড়ছে । বাইরে একটা ঝড় উঠবে বলে মনে হচ্ছে ,,, দরজাটা বন্ধ করে চলে আসে শ্রী ,,, চা এগিয়ে দেয় অবিকে।
চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে বইটার পাতা উল্টায় ,,, প্রথম পাতাতেই চোখ আটকে যায় ,,,,সেই অতি পরিচিত হাতের লেখায় ঝরে পড়েছে  মুক্তোর মতো কিছু শব্দ
" জীবনে তোমাকে পেলাম না ,
মৃত্যুতে ও তোমাকে পেলাম না ,
তবু আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই পাইনি ।।"

(কবিতা অজিত দত্তের )
ছবি সংগৃহীত
সমাপ্ত
অনিন্দিতা নস্কর

Saturday, March 9, 2019

মনিহার

আজ অনেকদিন পর শ্রায়া ওর বাপের বাড়ি এসেছে। ওদের বাড়িটা দমদম জংশনের কাছে হলেও ভিড় , ট্রেন বাসের আওয়াজ ,,,এসবের থেকে দূরে । পুরানো পাড়া,,কেমন যেন চারিদিক স্তিমিত মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে। অথচ এককালে  ও , টুবুল, পিকাই , মান্তু আর তমু মিলে এই পাড়া মাতিয়ে রাখতো। কত খেলা কত গল্প। পিকাইদের ছাদে  চড়ুইভাতি ,,,মান্তুর  পুতুলের বিয়ে এমনি আরো কত কি। মনে পড়ে , পুতুলের বিয়েতে মান্তুর মা ছোট্ট ছোট্ট লুচি বানিয়েছিল সাথে ছিল তেতুলের জল দেওয়া টক ঝাল ঘুগনি। আহা সেই স্বাদ যেন আজও মুখে লেগে আছে। আর একবার শ্রায়াকে সাইকেল চালানো শেখাতে গিয়ে বেচারা টুবুলের পা ভেঙে ছিল।  তারপর সব যেন কোথায় হারিয়ে গেলো। মেয়েবেলায় এসে পিকাই আর টুবুল যেন একটু দূরেই ছিটকে গেল। তমুর বাবা বদলি হয়ে আসানসোল চলে গেল ,,রয়ে গেল মান্তু আর ও। এরই মধ্যে ওদের বাড়িতে থাকতে এলো অনিকেত। শ্রায়াদের বাড়িতে অনেক লোকজন । বাবা মা, কাকু কাকিমা , ঠাম্মা আর ওরা ভাইবোন মিলিয়ে চারজন। শ্রায়ার একটা ছোট ভাই আছে আর কাকুর দুটো ছেলে,,, তারাও শ্রায়ার চেয়ে বেশ ছোট। তাই বাড়িতে শ্রায়ার বয়সী আর কেউ নেই। ওদের বাড়িতে প্রায়ই গ্রাম থেকে কেউ না কেউ আসে,,হয় পড়ার জন্য নাহয় চাকরির তাগিদে। অনিকেতও এসেছিল ,,,, বড় শহরে অনেক বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে। উদাত্ত কন্ঠে কবিতা বা জীবনমুখী গান সব কিছুতেই যেন বড় সাবলীল ছিল অনিকেত। গড্ডালিকা প্রবাহে চলতে থাকা জীবনে অনি ছিল একটা খোলা জানালা। শ্রায়ার রোজনামচায় ধীরে ধীরে মিশতে লাগলো পিট সিগারের গান, জয় গোস্বামী আর চ্যে গুয়েভারা । কি মাদকতা ছিল সেই দিনগুলোতে । চিন্তার স্রোত ছিন্ন করে সে এসে দাঁড়ায় নিচের তলার সেই ঘরটার সামনে। দরজায় লাগানো তালাটায় জং পড়েছে। দু তিনবার চাবি সমেত ঝাঁকুনি দিতেই খুলে গেল। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে শ্রায়া,,,,, চারিদিকে জমেছে ঝুল ,,পড়েছে ধূলো। অভ্যস্ত নাক ঠিক খুঁজে নেয় তার ফেলে আসা কিশোরী বয়সের গন্ধকে নাকি অনিকেতের গন্ধকে ,,,বুঝতে পারে না সে। স্টাডি টেবিলে আজো পড়ে আছে  জয় গোস্বামীর "যারা বৃষ্টিতে ভিজে ছিল" ,,,,, সযত্নে আঁচল দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করে দেয় । তারপর নিয়ে আসে নাকের কাছে ,,,, প্রাণ ভোরে শ্বাস নেয় সে,,,, খুঁজে পেতে চায় তিরিশ বছর আগে ফেলে আসা সেই দিনটার গন্ধ , ঠোঁট দিয়ে অনুভব করতে চায় তার অনিকেত কে।
সে তো নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে সঁপে দিতে চেয়েছিল অনির হাতে। কিন্তু ,,, না অনি সুযোগের ব্যবহার করেনি ,,, শুধু দু চোখ ভরে দেখেছিল তাকে ,,, সেই দৃষ্টিতে কামনা ছিল না ,,,ছিল গভীর সমুদ্রের  চেয়েও গভীর ভালোবাসা। অনিকেত কোনো কিছু ছিনিয়ে নিতে জানতো না ,,,, ওর চোখ দুটো দেখলেই মনে হতো কেউ যদি বলে তোমার প্রাণ টা দাও সেটাও বোধহয় নির্দ্বিধায় দিয়ে দেবে। এমনি ছিল অনিকেত,,, শ্রায়ার অনি।
শ্রায়া গাইতো ,,," আমার সকল রসের ধারা ,,তোমাতে   আজ হোক না হারা " আর অনি গাইতো ,," last christmas I gave you my heart"... Wham ,,, সে এক অদ্ভূত যুগলবন্দী ।
কখন যেন শ্রায়া গুন গুনাতে লেগেছিল গান টা ,,,, মিহিরের আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে তার। মিহির তার ছোট ভাই ,,,, মিহির বলে ,,"দিদি তুই আজো অনিকেত দাকে ভুলিসনি তাই না? " একটু চুপ করে থাকে শ্রায়া ,,,, ভাইয়ের কথার উত্তর না দিয়েই বইটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। আগামী সপ্তাহে বাড়িটা ভাঙা হবে। তাই ওরা সব ভাই বোন এসেছে শেষবারের মতো তাদের ফেলে আসা ছোটবেলাকে ফিরে পেতে।
বাকি সবাই তাদের ছোটবেলার কিছু জিনিস তুলে নিচ্ছে ,,, গল্প শোনাচ্ছে তাদের ছেলে মেয়েদের। শ্রায়া শুধু একা ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়িটার প্রতিটা খাঁজে,,,কি জানি যদি আরো কিছু স্মৃতির মনি মুক্ত খুঁজে পাওয়া যায় ,,,তাহলে সে সযত্নে তুলে নেবে ,,, গাঁথবে তাই দিয়ে মনিহার। সব কাজের শেষে , সারাদিনের দায়িত্বের বোঝা নামিয়ে যখন শ্রায়া একা হবে তার বহুতলের ফ্ল্যাটে , তখন সে তুলে নেবে এই মনিহার ,,,,একটা একটা করে দেখবে মুক্তো গুলোকে ।

অনিন্দিতা নস্কর

স্বপ্নের বিলাসিতা


স্বপ্নের বিলাসিতা

কাঁধটা যাচ্ছে ঝুঁকে অবসাদে
মুহূর্তের শব্দ বাণে ছিন্ন মায়ালোকে
নিজের বানানো স্বপ্নপুরী
প্রতিটা পাথরে সুখ দুঃখের কাটাকুটি
অশ্রু রক্ত মিলে মিশে পূতি গন্ধময়।
ব্যর্থ জীবনের গ্লানি বয়ে আর কত দিন
ঘুরে ঘুরে বেড়াবো অবসন্ন মনে
হৃদয় হতে পড়ছে রক্ত অবিরত
বৃষ্টির জল আর কান্না ,,, টুপটুপ ,,টুপ
রাতের অন্ধকারে সব একাকার,,,
হাত বাড়িয়ে একমুঠো শ্বাস ,, ধরতে পারা
রূদ্ধ শ্বাস কিছু প্রতীক্ষা,
তারপর হবে যদি শেষ ,,,, আমার
শবদেহে বানিও কোনো ব্যর্থ প্রেমের তাজমহল ।।
কাঁধটা যাচ্ছে ঝুঁকে অবসাদে
মুহূর্তের শব্দ বাণে ছিন্ন মায়ালোকে
নিজের বানানো স্বপ্নপুরী
প্রতিটা পাথরে সুখ দুঃখের কাটাকুটি
অশ্রু রক্ত মিলে মিশে পূতি গন্ধময়।
ব্যর্থ জীবনের গ্লানি বয়ে আর কত দিন
ঘুরে ঘুরে বেড়াবো অবসন্ন মনে
হৃদয় হতে পড়ছে রক্ত অবিরত
বৃষ্টির জল আর কান্না ,,, টুপটুপ ,,টুপ
রাতের অন্ধকারে সব একাকার,,,
হাত বাড়িয়ে একমুঠো শ্বাস ,, ধরতে পারা
রূদ্ধ শ্বাস কিছু প্রতীক্ষা,
তারপর হবে যদি শেষ ,,,, আমার
শবদেহে বানিও কোনো ব্যর্থ প্রেমের তাজমহল ।।

অনিন্দিতা নস্কর